ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

৫৪ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

২০২৫ এপ্রিল ১২ ১৩:৪৫:৩৪
৫৪ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। প্রায় এক যুগ পর দুই দেশের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক হতে যাচ্ছে চলতি মাসেই ঢাকায়। এতে অংশ নিতে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমেনা বেলুচ এবং সম্ভাব্য সফরে থাকছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।

এফওসি বৈঠক ও উচ্চপর্যায়ের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা আবারও শুরু হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। ২০১০ সালের পর এটাই হবে দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দুই দেশের সম্পর্ক নতুন বাস্তবতায় সচল হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানানোর পর গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে দুই নেতার বৈঠক হয়। এরপর সামরিক ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের সফর, যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের পুনর্বহালের আলোচনা—সব মিলিয়ে দৃশ্যমান উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরেই করাচি থেকে সরাসরি কনটেইনারবাহী জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে, যা এই প্রথম। আগে এ রুট ব্যবহার হয়নি। পাকিস্তানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ডলার হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, তা ৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করেছে। আগে যাদের জন্য আনাপত্তিপত্র (NOC) লাগতো, এখন সেটার প্রয়োজন নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি বাতিল করেছে পাকিস্তান।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জেনারেল এসএম কামরুল হাসান ইসলামাবাদ সফর করে পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের অন্যতম স্পর্শকাতর ইস্যু হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা। এ নিয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি বহুদিন ধরেই উঠে আসছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ বালোচ বলেন, "১৯৭১ সাল একটি বেদনাদায়ক ইতিহাস হলেও ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশ একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছেছিল। অতীতকে পেছনে রেখে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর সময় এখন।"

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেই পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে ঢাকা। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এ অংশ নেওয়ার আগ্রহও সেই প্রেক্ষাপটেই দেখা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে ছিল। এখন নতুন কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ এসেছে।” তিনি আরও মনে করেন, “বাণিজ্য ও কৌশলগত দিক বিবেচনায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন সময়োচিত।”

দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আলোচনা চলছে, যা ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ। করাচি-চট্টগ্রাম সমুদ্রপথ, ভিসা সহজীকরণ এবং বাণিজ্য বার্তা বিনিময়কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে