ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

ছাত্রদল-শিবির-এনসিপির আয়ের উৎস প্রকাশ

২০২৫ মার্চ ১০ ১০:৪৬:০৭
ছাত্রদল-শিবির-এনসিপির আয়ের উৎস প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় বড় ছাত্র সংগঠনগুলো অর্থের উৎস নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। সম্প্রতি বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্রশিবির একে অপরের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে, গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের যোগান নিয়েও চলছে নানাআলোচনা।

সম্প্রতি ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদলের নতুন দলের আয়ের উৎস নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এদিকে, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি এবং দখল করার অভিযোগ উঠেছে। একই ধরনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও ছিল। ছাত্রদলের এসব অভিযোগকে 'অপরিপক্ক' বলে আখ্যা দিয়েছে ছাত্র শিবির।

ছাত্রদলের আয়ের উৎস :

বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রদল কমিটি থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে তারা প্রকাশ্যে কর্মসূচি চালাতে পারেনি। তবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির, সন্ত্রাস এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। গত আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে। এরপর দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের দলের জন্য অর্থ সংগৃহীত হচ্ছে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গঠিত 'বিএনপি পরিবার' নামের একটি সংগঠন থেকে। এছাড়া, সাবেক নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রোগ্রামগুলোতে খরচ করছেন।

শিবিরের অর্থের উৎস কোথায়:

ছাত্র শিবিরও সম্প্রতি বড় আকারে কর্মসূচি পালন করছে, যার মধ্যে ইফতার বিতরণ উল্লেখযোগ্য। ছাত্রদল শিবিরের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর, শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা প্রতিদিন তিন লাখ টাকা খরচ করে, কিন্তু এই খরচের পরিমাণ অনুমানমাত্র। শিবিরের সাধারণ সম্পর্ক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম জানিয়েছেন, তাদের সদস্যরা স্বেচ্ছায় দান করেন এবং প্রাক্তনরা নিয়মিত 'এয়ানত' (দান) করেন। তাদের আয়ের আরেকটি উৎস হলো প্রকাশনা সামগ্রীর বিক্রির মুনাফা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের উৎস:

গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে বিশাল খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপির পক্ষ থেকে দলের অর্থের উৎস সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে তারা দাবি করেছে, তাদের দলটি তরুণ পেশাজীবীদের কাছ থেকে ডোনেশন পেয়ে থাকে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চাঁদাবাজি এবং অর্থ সংগ্রহের ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "চাঁদাবাজি এখন প্রকটভাবে চলছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে শুধু ব্যানারের পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজি সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশে নির্বাচনি তহবিল কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো চালানোর তহবিল প্রধানত আসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে।"

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা রাজনীতির সংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্য আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতা আনার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সঠিক পরিবর্তন সম্ভব হয়।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অপরিবর্তিত থেকে গেছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর আয় এবং খরচের বিষয়ে স্বচ্ছতা অনুপস্থিত থাকার ফলে, জনগণের মধ্যে সন্দেহ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির সংস্কৃতিতে সঠিক পরিবর্তন আনতে হলে, আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এনামুল/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে