ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংক খাতে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা

২০২৪ মার্চ ১৩ ১০:২৫:৫৮
ব্যাংক খাতে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমানত সংগ্রহে অসুস্থ প্রতিযোগীতা চলছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে। সর্বোচ্চ ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংক। এ ধরনের উচ্চ সুদে আমানত নিলে সে প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ১৬-১৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে।

এছাড়া কয়েকটি দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত পেতে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রস্তাব করছে। সেক্ষেত্রে ঋণ দিতে হবে ২০-২১ শতাংশ সুদে। এই অসম প্রতিযোগিতার কারণে ঋণের সুদও বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ঋণগ্রহীতারা।

উচ্চ সুদের এ টাকা ফেরত আসবে কি না-সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই-এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

তাদের মতে-ইতোপূর্বে যত অনিয়ম হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে লোভনীয় অফারে আমানত নিয়ে পরে সুদ-আসল দুটোই খোয়া গেছে। অর্থাৎ এভাবে অস্বাভাবিক সুদে আমানত নিলে সেখানে সুদ তো দূরে থাক, মূল টাকাও ফেরত পাওয়ার আশা নেই।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে এখন আমানত ও ঋণে সুদের হার বাড়ছে, এটা ঠিক। সেটা সর্বোচ্চ ১২-১৩ পর্যন্ত যেতে পারে। তবে ১৭-১৮ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে ব্যবসা করলে সে ব্যবসা টিকবে না। আর যদি এটা দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণে খাটানো হয় তাহলে সে ঋণগ্রহীতা জানে মারা যাবে।

তিনি বলেন, আমানতকারীদের সাবধান হতে হবে। কেউ অফার করলেই চলে যাওয়া যাবে না। দেখতে হবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটা কেমন। যাচাই-বাছাই ছাড়া আমানত রাখলে বিপদ হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এটা যদি ঘটে থাকে, সেটি হবে বিরাট অশনি সংকেত। উচ্চসুদে আমানত নিয়ে লুটতরাজ হবে। দেশে এমন কোনো ব্যবসা নেই, যা দিয়ে আমানতের এ টাকা পরিশোধ করতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ প্রজন্মের একটি দুর্বল ব্যাংক ১০ বছর মেয়াদি আমানতে সুদ অফার করেছে ১৩ শতাংশ। এছাড়া একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক বছর মেয়াদি আমানত নিচ্ছে ১২ শতাংশে। আমানতের অঙ্ক কোটি টাকার ওপরে হলে সুদহার হবে ১৩ শতাংশ। এভাবেই টাকার অঙ্ক ও মেয়াদ বাড়লে সুদের হার ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এটা আনুষ্ঠানিক কোনো অফার নয়। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে এসব অফার অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। কখনো কখনো ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমেও এসব লোভনীয় অফার দেওয়া হয়।

এদিকে ব্যাংকঋণের আনুষ্ঠানিক সুদহার বেড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত জুলাইয়ে বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ সুদহার তুলে নেওয়ার পর এটিই ঋণের সর্বোচ্চ সুদ। গত ফেব্রুয়ারিতেও ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২.৪৩ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে হচ্ছে ১৩.১১ শতাংশ।

ঋণের সুদ নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে এখন প্রতি মাসেই ঋণের সুদ বাড়ছে। তাতে বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাসহ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা। কারণ নতুন করে ব্যাংকঋণ নিতে গেলেই গুনতে হচ্ছে বেশি সুদ। ফলে বাড়ছে ব্যবসার খরচও।

অন্যদিকে ঋণের সুদ বেশি বেড়ে যাওয়ায় সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ‘সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ বা স্মার্ট পদ্ধতিতে ঋণের সুদের ভিত্তি হার নির্ধারিত হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় বাড়তি ৩.৭৫ শতাংশ সুদ। এ দুইয়ে মিলে ঋণের চূড়ান্ত সুদহার নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। মার্চে এসে স্মার্ট হার বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি যুক্ত হওয়া সুদের কিছুটা লাগাম টানা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে স্মার্ট হারের সঙ্গে বাড়তি যুক্ত হবে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ। আগে যুক্ত হতো ৩.৭৫ শতাংশ।

ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২.৫০ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫.৫০ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। সে হিসাবে মার্চ মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৫.১১ শতাংশ এবং আমানতে ১২.১১ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৪.৪৩ শতাংশ এবং আমানতে ১১.৪৩ শতাংশ।

এখন যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসাবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭.১০ শতাংশ, আগস্টে ৭.১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭.২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭.৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭.৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮.১৪ শতাংশে, জানুয়ারিতে ছিল ৮.৬৮ শতাংশ এবং সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে স্মার্ট রেট প্রায় এক শতাংশ বেড়ে ৯.৬১ শতাংশে উঠেছে।

শেয়ারনিউজ ১৩ মার্চ ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে