ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে দৌড়াচ্ছে ‘পাগলা ঘোড়া’, থামাবার কেউ নেই?

২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৯:৪৫:২৭
শেয়ারবাজারে দৌড়াচ্ছে ‘পাগলা ঘোড়া’, থামাবার কেউ নেই?

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) লিমিটেড এমন এক অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে দৌড়াচ্ছে, যা বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের চরম উদ্বেগে ফেলেছে। মাত্র ১৩ কর্মদিবসে শেয়ারটির দাম ৪২ টাকার নিচ থেকে ৯৩ টাকায় পৌঁছেছে। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এবং সাধারণ বিনিয়োগের প্রবণতা বিবেচনায় এ ধরনের উর্ধ্বগতি সম্পূর্ণই কারসাজির।

ডিএসই-এর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারের অধিকাংশ দিন বিক্রেতা সংকটে পড়েছে। এর ফলে বেশিরভাগ দিনই লেনদেন সাময়িকভাবে হল্টেড হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রমাণ করে শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয় স্বাভাবিক চাহিদার উপর নির্ভর করছে না, বরং সীমিত সংখ্যক বিনিয়োগকারীর কর্মকাণ্ড বা হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধিই দামকে তুমুলভাবে উর্ধ্বমুখী করছে।

কোম্পানি পক্ষ থেকে ডিএসই-কে বারবার জানানো হয়েছে, এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) নেই। অর্থাৎ বাজারে শেয়ারদরের এই চরম উর্ধ্বগতি সম্পূর্ণ স্পেকুলেটিভ এবং অকারণ।

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও পারফরম্যান্সও বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার মতো নয়। সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২০ পয়সা। ২০২৪ সালে কোম্পানিটি মাত্র ০.২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে, যা শেয়ারবাজারে ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।

মালিকানার দিক থেকেও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশীদারিত্ব মাত্র ২১.৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ৯.৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৬৮.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেই শেয়ারটি সিংহভাগ রয়েছে।

কোম্পানিটি কেবল লোকসানিই নয়, এর রিজার্ভও নেগেটিভ। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য শেয়ারপ্রতি মাত্র ২ টাকা ৭৫ পয়সা। অথচ শেয়ারটির দাম ৯৩ টাকা!

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উর্ধ্বগতি স্পেকুলেটিভ ট্রেডিং বা বাজার ম্যানিপুলেশনের সংকেত বহন করে। শেয়ারের দাম কোম্পানির মৌলিক আর্থিক অবস্থা ও পরিচালনাগত কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হচ্ছে, হঠাৎ চাহিদা বা উর্ধ্বমুখী শেয়ারদরের ফাঁদে আটকে পড়া বিপজ্জনক হতে পারে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা—ডিএসই এবং বিএসইসিএ—জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ না করলে বাজারের স্বাভাবিকতা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর অর্থের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। শেয়ার কারসাজি রোধ করতে অস্বাভাবিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলো পর্যবেক্ষণ করা, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য যাচাই করা এবং প্রয়োজন হলে হল্ট বা অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন, শেয়ারবাজারের বেশিরভাগ কোম্পানির আচরণ উদ্বেগজনক। শেয়ারদর বাড়ার সময় তারা ডিএসই-কে জানায়, কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কিন্তু শেয়ার দাম যখন তুঙ্গে পৌঁছায় এবং কারসাজিকারীদের শেয়ার বিক্রি করার সময় হয়, তখন হঠাৎ করে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ঘোষণা করে। পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই তথ্যের সঙ্গে বাস্তবায়নের কোন সম্পর্ক থাকে না। এমন অস্থির ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে এবং বাজারের বিশ্বাস নষ্ট করে।

এই ধরনের ‘পাগলা ঘোড়া’ শেয়ার পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে বাজারে আস্থা ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীর অর্থ বড় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের অত্যন্ত সতর্ক থাকা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরী। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, তাদের ঘুম ভাঙ্গে যখন কারসাজিকারীরিা নিরাপদে সটকে পড়ে।

সালাহউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে