ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

যাবুর কিতাবের অনুসারী যারা

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ১৩:৩৩:৫১
যাবুর কিতাবের অনুসারী যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলাম ধর্মে আসমানী কিতাব হিসেবে স্বীকৃত চারটি প্রধান ধর্মগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো 'জাবুর'। তাওরাত, ইনজিল (বাইবেল) এবং পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি উল্লিখিত এই কিতাবটি হযরত দাউদ (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। তবে, এই কিতাবটির বর্তমান অবস্থা, এর অনুসারী এবং এর মূল বিষয়বস্তু নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও প্রশ্ন দীর্ঘদিনের।

'জাবুর' কিতাবটি হযরত দাউদ (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ইসলামে তিনি আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ও রাসূল হিসেবে পরিচিত এবং ইজরাইলের একজন ধর্মপ্রাণ ও প্রভাবশালী বাদশাহও ছিলেন। ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা তাকে 'কিং ডেভিড' বা রাজা দাউদ হিসেবে শ্রদ্ধা করেন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০১০ থেকে ৯৭০ অব্দের মধ্যে, 'জাবুর' কিতাবের বিভিন্ন অংশ দাউদ (আ.)-এর উপর নাজিল হয়েছিল। এই সময়কালকে বৃহত্তর ইজরাইলের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

'জাবুর' মূলত আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা, গুণগান, হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা, কাব্যিক স্তুতি এবং আল্লাহর মহিমা ও পরাক্রমের উপর প্রতিফলনের এক সংকলন। এটি সরাসরি আইন-কানুন বা রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাবলী সম্বলিত নয়, যেমনটি পবিত্র কুরআন বা তাওরাত-এ পাওয়া যায়। এই কিতাবে মোট ১৫০টি অধ্যায় বা প্রার্থনা সংগীত রয়েছে, যার প্রতিটি আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করে। এর প্রধান বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, ঐশ্বরিক ন্যায়বিচার ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা। এছাড়া, এতে প্রজ্ঞা, আল্লাহর উপর আস্থা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আশার বার্তা প্রদান করা হয়েছে।

আধুনিক যুগে 'জাবুর' কিতাবটি কি এখনো বিদ্যমান? যদিও একসময় কিছু মানুষের ধারণা ছিল যে এটি হারিয়ে গেছে, তবে বর্তমানে এটি অনলাইন পোর্টাল এবং বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরিতে পিডিএফ সংস্করণসহ বিভিন্ন রূপে সহজলভ্য। তবে, ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো, মূল 'জাবুর' কিতাবটি কালের পরিক্রমায় আংশিকভাবে পরিবর্তিত বা বিকৃত হয়েছে। বর্তমানে বাইবেলের 'বুক অফ সামস' (Book of Psalms)-এর মধ্যে 'জাবুর'-এর কিছু অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পবিত্র কুরআন নিজেও 'জাবুর'-এর কথা উল্লেখ করে এর ঐশ্বরিক উৎসকে নিশ্চিত করে।

বর্তমান বিশ্বে 'জাবুর'-এর কোনো স্বতন্ত্র অনুসারী ধর্মগোষ্ঠী নেই, যেমনটি কুরআন বা তাওরাতের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ 'জাবুর' বা বাইবেলের 'সামস'কে অত্যন্ত পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করে। ইহুদিরা তাদের উপাসনালয় সিনাগগে প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা সংগীত হিসেবে 'জাবুর'-এর স্তুতিগুলো আবৃত্তি করে থাকে। খ্রিস্টানরাও এটিকে তাদের ধর্মগ্রন্থের অংশ হিসেবে দেখে এবং উপাসনার সময় এর কাব্যিক অংশগুলো গেয়ে থাকে।ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, 'জাবুর'-এর মূল শিক্ষাগুলো পবিত্র কুরআনে অন্তর্ভুক্ত ও নিশ্চিত করা হয়েছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে কুরআন হলো সর্বশেষ ও সম্পূর্ণ ঐশী গ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী সকল কিতাবের শিক্ষাগুলোকে ধারণ করে।

'জাবুর' কিতাবটি তার অনন্য অবস্থান, ঐতিহাসিক প্রভাব এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এর চলমান প্রাসঙ্গিকতার জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। যদিও এর মূল রূপ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এটি একটি ঐশ্বরিক বাণী হিসেবে এর গুরুত্ব ধরে রেখেছে এবং মানবজাতিকে আল্লাহর মহিমা ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের পথে আহ্বান জানায়।

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে