ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

উত্তরা ফাইন্যান্স: চার বছর অপ্রকাশিত বড় আর্থিক সংকট

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ২৩:২৪:৩০
উত্তরা ফাইন্যান্স: চার বছর অপ্রকাশিত বড় আর্থিক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের আর্থিক চিত্র সম্প্রতি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১২ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের এই নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটির নিরীক্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশিত থাকা এই আর্থিক প্রতিবেদন বাজারে নতুন আলোচনা ও আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিনিয়োগকারীরা মন্তব্য করেছেন, এত বড় মূলধন ঘাটতির খবর দীর্ঘ চার বছর গোপন রাখা একটি গুরুতর আস্থাহীনতার ইঙ্গিত।

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে উত্তরা ফাইন্যান্সের সুদ বাবদ লোকসান হয়েছে ৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা, এবং পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বছর শেষে কর পরবর্তী নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩৩ টাকা ১৩ পয়সা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিপুল লোকসান কোম্পানির আর্থিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।

নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে যোগ্য মূলধন ঘাটতি ৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় মূলধন ঘাটতি ৬৫২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই হিসাব থেকে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কার্যত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূলধন মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছর উত্তরা ফাইন্যান্স তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএফআইএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে ১৪৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই আরও ১ হাজার ৩৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন করা হয়েছে। নিরীক্ষকরা বলছেন, এসব লেনদেনে কোম্পানি যথাযথ সতর্কতা বা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করেনি, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধান লঙ্ঘন।

এদিকে, অনুমোদনবিহীন বকেয়া লেনদেন ২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ছুঁয়েছে। এর বড় অংশই স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে, যা আর্থিক অসদাচরণের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই এই বিপুল বকেয়ার বিপরীতে ২ হাজার ১৫০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ব্লক দায় রেকর্ড করেছে।

নিরীক্ষক আরও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০ সালের ৩ আগস্ট জারি করা এফআইডি সার্কুলার নং–৮ অনুযায়ী, এক বছরের বেশি সময় সমন্বয়হীন বকেয়ার বিপরীতে শতভাগ সঞ্চিতি গঠন বাধ্যতামূলক। কিন্তু উত্তরা ফাইন্যান্স এ বিষয়ে কোনো সঞ্চিতি গঠন করেনি, যা স্পষ্টভাবে নির্দেশনা অমান্য করা হিসেবে বিবেচিত।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৫০৪টি, যার মধ্যে সাধারণ, বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৫৫.৫৬ শতাংশ শেয়ার। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানির অদক্ষতা ও অনিয়মের চাপ মূলত ছোট বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলছে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে