ঢাকা, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আইপিও অর্থ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের মুখে লুব-রেফ বাংলাদেশ

২০২৫ ডিসেম্বর ০৭ ০০:১৩:৪৬
আইপিও অর্থ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের মুখে লুব-রেফ বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড আইপিও তহবিল ব্যবহারে বড় ধরনের অনিয়ম করেছে বলে অডিট রিপোর্টে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য জমি ও ভূমি উন্নয়নে কোম্পানিটি যে বরাদ্দ নির্ধারণ করেছিল, তার চেয়ে ছয়গুণেরও বেশি ব্যয় করেছে, কিন্তু এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়নি।

কোম্পানিটির অডিটর এমএবি অ্যান্ড জে পার্টনার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, জমি ও ভূমি উন্নয়নের জন্য লুব-রেফ বরাদ্দ রেখেছিল ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, কিন্তু ব্যয় করেছে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা—অতিরিক্ত প্রায় ৪১ কোটি টাকা। আইপিও তহবিলের ব্যবহার পরিবর্তনে শেয়ারহোল্ডারদের ইজিএম এবং পরে বিএসইসি অনুমোদন বাধ্যতামূলক হলেও কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।

অডিট রিপোর্টে আরও বলা হয়, কোম্পানিটি দুই দফায় এই ব্যয় করেছে। প্রথম দফায় ৩০ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত ব্যয় হয় ৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সব অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে পরিশোধ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ১ মে ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নথি পাওয়া গেছে, তবে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ের কোনো সমর্থনযোগ্য কাগজপত্র অডিটর পাননি।

এ বিষয়ে লুব-রেফ-এর এক কর্মকর্তা শেয়ারনিউজকে জানান, প্রকল্প শুরুর সময় জমির পরিমাণ ছিল ২৫ একর, পরে বাড়িয়ে ৪০ একর করতে হয়েছিল। কর্ণফুলী নদীর তীরের প্রকল্পস্থল খুব নিচু হওয়ায় ২০–২৪ ফুট বালু ভরাট করতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, “ইজিএম করা হয়নি, তবে কমিশনকে জানানো হয়েছে এবং তাদের দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে।”

কোম্পানির বেস অয়েল রিফাইনারি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে আইপিও তহবিল ১৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পে জেটি, ট্যাংক টার্মিনাল, আধুনিক রিফাইনারি, হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট ও বিশেষায়িত বিটুমেন প্ল্যান্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৯০০ কোটি টাকা স্থানীয় ঋণ ও ৭৫০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সময়মতো ছাড় না পাওয়ায় অগ্রগতি ব্যাহত হয়।

অডিট রিপোর্ট বলছে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত লুব-রেফ আইপিও তহবিল থেকে ব্যয় করেছে ১৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে এবং মে-জুন মাসে ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়—যার মধ্যে ভূমি উন্নয়নে ১৩.৭০ কোটি এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটালে ২৩.৪০ কোটি টাকা। অব্যয়িত অর্থ মূল হিসেবে রয়েছে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, সুদসহ দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

একসময় অত্যন্ত লাভজনক হিসেবে বিবেচিত লুব-রেফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৬ কোটি টাকার রেকর্ড ক্ষতি দেখিয়েছে। ব্যাংকিং বিধিনিষেধ, এলসি সংকট ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঘাটতির কারণে কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি।

বাজারে তালিকাভুক্তির পর ২০২২-২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটি নিয়মিত মুনাফা করেছে, এরমধ্যে ২০২০-২১অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তবে অক্টোবর ২০২৩ থেকে এলসি জটিলতায় কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয় এবং কোম্পানি বাধ্য হয়ে স্থানীয় বিক্রেতার কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে উৎপাদন চালায়। ফলে ২০২৪ সালে কোম্পানির ক্ষতি হয় ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যার আগের বছর লাভ ছিল ২০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

লুব-রেফ আইপিও তহবিলের ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ নোটিশ ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে রেখেছিল। ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে কোম্পানি এ অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি বলে জানা গেছে। সুদসহ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত অব্যয়িত অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত লুব-রেফ ২০০৬ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে তাদের ৬০ শতাংশ লুব্রিকেন্ট পুনর্ব্যবহৃত উৎস থেকে, আর ৪০ শতাংশ আমদানি করা বেস অয়েল থেকে উৎপাদিত হয়।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে