ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

অবশেষে পরিবর্তন হয়ে গেল ‍উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগাভাগি পদ্ধতি

২০২৫ আগস্ট ২৬ ১১:৫৩:৫৩
অবশেষে পরিবর্তন হয়ে গেল ‍উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগাভাগি পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি বা সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিরোধ, দখলদারিত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি মামলা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এরকম কোনো না কোনো জটিলতা আছে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার নতুন ও বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করেছে, যাতে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নির্দিষ্ট নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাগ হয় এবং ভবিষ্যতে কেউ প্রতারণা বা জবরদখলের সুযোগ না পায়।

নতুন নিয়মে কী বলা হয়েছে:

১. আবশ্যিক আপোষ বণ্টননামা দলিল:

এখন থেকে কোনো পরিবার যদি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি ভাগ করতে চায়, তাহলে আবশ্যিকভাবে "আপোষ বণ্টননামা দলিল" করতে হবে। এটি হতে হবে রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত, যাতে সবাই আইনি স্বীকৃতি পায়।

২. মৌখিক বণ্টন অবৈধ:

অনেক সময় পরিবারে ভাই-বোন বা আত্মীয়দের মধ্যে মৌখিকভাবে জমি ভাগ হয়ে যায়, কিন্তু তার কোনো লিখিত দলিল করা হয় না। এখন এটি আর বৈধ হবে না। মৌখিক বা অরেজিস্টারড চুক্তির ওপর আর নির্ভর করা যাবে না।

দলিল ছাড়া জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর নিষিদ্ধ:

বণ্টননামা দলিল ছাড়া কেউ জমি বিক্রি করলে বা কাউকে হস্তান্তর করলে সেটি আইনত অবৈধ গণ্য হবে। এর জন্য আইনি শাস্তিও হতে পারে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন ২০২৩ অনুযায়ী ব্যবস্থা:

যারা এই নিয়ম লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী মামলা করে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। এতে জরিমানা বা জেল পর্যন্ত হতে পারে।

নামজারি মানেই মালিকানা নয়:

অনেকেই মনে করেন, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের নামে জমির খাজনা বা নামজারি করে ফেলেন, তাহলে তিনিই মালিক।এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কারো নামে নামজারি হয় কিন্তু বণ্টননামা দলিল না থাকে, তাহলে সেই নামজারিও অবৈধ বলে গণ্য হবে।

কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন?

যেসব পরিবারে এখনও জমি ভাগাভাগি হয়নি বা অভিভক্ত জমি রয়েছে, তাদের অবশ্যই দলিল করতে হবে।

যারা অতীতে মৌখিকভাবে জমি ভাগ করেছে, এখন তাদেরকে রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে সেই জমির আইনি দলিল করাতে হবে।

যারা পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া জমি দখলে রেখে বসবাস করছেন, অথচ আইনিভাবে কোনো কাগজপত্র নেই—তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পুরনো নিয়ম কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

২০০৪ সালেই প্রথমবার আপোষ বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক মানুষ বিষয়টি এড়িয়ে যান। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতার অভাব, দুর্নীতি ও প্রথাগত ব্যবস্থার কারণে কেউ এই নিয়ম মানেননি।

ফলে, জমি ভাগাভাগি ও মালিকানা নিয়ে মামলা, প্রতারণা, দলিল জালিয়াতি, জবরদখলসহ নানা সমস্যা বেড়েছে। এই কারণেই সরকার আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:

ভূমি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিয়ম বাস্তবায়ন হলে বছরের পর বছর ধরে চলা পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মামলা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।

জমির উপর কাদের কত অংশ আছে, তা লিখিতভাবে স্পষ্ট থাকবে — ফলে ভবিষ্যতে জাল দলিল, প্রতারণা ও জবরদখলের সুযোগ থাকবে না।

এটি জমির বাজারেও স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আনবে।

সতর্কবার্তা ও পরামর্শ:

যারা এখনো আপোষ বণ্টননামা দলিল করেননি, তাদের দ্রুত তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।দেরি করলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যে তথ্যগুলো দরকার হতে পারে:

জমির খতিয়ান

হাল দাগ ও মৌজা

ওয়ারিশানদের তালিকা

জমি কত শতাংশ কাকে বরাদ্দ হবে তার হিসাব

সবাই স্বাক্ষর করলে দলিল রেজিস্ট্রি করা সম্ভব

এই নতুন আইন ও নিয়ম বাস্তবায়ন হলে:

পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে

জমির মামলা কমবে

প্রতারণা ও জালিয়াতি হ্রাস পাবে

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদে সম্পত্তির মালিকানা পাবে

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে