ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

যে গজব আসে রহমতের বেশে

২০২৫ আগস্ট ১৫ ১২:১৯:২৩
যে গজব আসে রহমতের বেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, ক্রমাগত পাপে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও আমাদের পার্থিব জীবন কেন এত স্বাচ্ছন্দ্যময়? বিপদ-আপদহীন, প্রাচুর্যে ভরা জীবন কি সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষণ? ইসলামিক পরিভাষায় এই অবস্থাকে এক ভয়ঙ্কর গজবের পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়, যার নাম ‘ইস্তেদরাজ’—এমন এক অবকাশ যা বান্দাকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

আরবিতে ‘ইস্তেদরাজ’ শব্দের অর্থ হলো ‘ধীরে ধীরে পাকড়াও করা’। ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতায় ডুবে থাকে এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়, কিন্তু আল্লাহ তাকে শাস্তি না দিয়ে বরং দুনিয়ার সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সম্পদ ও সাফল্য দান করতে থাকেন, তখন সেই অবস্থাকে ইস্তেদরাজ বলা হয়।

এই আপাত নিয়ামত পেয়ে বান্দা মনে করতে শুরু করে যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। ফলে সে তওবা করার পরিবর্তে আরও বেশি পাপে নিমজ্জিত হয়। আল্লাহ তাকে অবকাশ দেন, যেন তার পাপের বোঝা ভারী হতে থাকে। অবশেষে যখন শাস্তির সময় আসে, তখন হঠাৎ করেই তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ইস্তেদরাজ

এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সূরা আল-আন'আমের ৪৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

“তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল, আমিও তাদের জন্য সকল ঐশ্বর্যের দুয়ার খুলে দিলাম। তাদেরকে দেয়া সুখ-ঐশ্বর্যের আতিশয্যে একসময় তারা উল্লসিত হয়ে উঠল- তখন আমি হঠাৎ তাদের পাকড়াও করলাম, এতে তারা হতাশ হয়ে গেল।”

একইভাবে, সূরা ইউনুসের ১২ নম্বর আয়াতে মানুষের বিস্মৃতিপ্রবণ চরিত্রের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, বিপদে পড়লে মানুষ আল্লাহকে ডাকে, কিন্তু বিপদ কেটে গেলে সে এমনভাবে নিজের পথে চলে যায় যেন সে কখনোই আল্লাহকে ডাকেনি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন:

“যখন তুমি দেখবে যে, আল্লাহ তা'আলা কোনো বান্দাকে তার পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ার কাঙ্ক্ষিত বস্তু দিচ্ছেন, তখন জেনে রেখো, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া অবকাশ বা ইস্তেদরাজ।” (মুসনাদে আহমাদ)

একজন বিশ্বাসীর জন্য পার্থিব সাফল্য আল্লাহর সন্তুষ্টির একমাত্র মাপকাঠি নয়। বরং, বিপদ-আপদ ও পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ অনেক সময় বান্দাকে নিজের নিকটবর্তী করেন। তাই, পাপাচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় অর্জিত সাফল্য বা স্বাচ্ছন্দ্যকে আল্লাহর রহমত ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভোগা উচিত নয়। এটি হতে পারে রহমতের আড়ালে এক নীরব গজব, যা বান্দাকে তার অজান্তেই চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, পার্থিব নিয়ামত লাভের মুহূর্তে নিজের আমল ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের দিকে দৃষ্টি দেওয়াই মুমিনের প্রধান কর্তব্য।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে