ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

অস্থিরতার আভাস পেলেই চলে যাব—বিদেশি বিনিয়োগকারীদের  কড়া বার্তা

২০২৫ আগস্ট ১৪ ২২:১৭:২০
অস্থিরতার আভাস পেলেই চলে যাব—বিদেশি বিনিয়োগকারীদের  কড়া বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় বুধবার (১৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, তাঁরা দ্রুত মুনাফার লক্ষ্যে কাজ করা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী—যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, মুহূর্তে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। বিনিয়োগকারীদের আহ্বান, সহিংসতা পরিহার করা হোক, কারণ মতপার্থক্যের সমাধান রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্ভব। তাঁর এই বক্তব্য নিছক কূটনৈতিক ভাষা নয়; বরং বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রবাহের মনস্তত্ত্বের সরাসরি প্রতিফলন।

বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০০৬–২০০৮ সালের জরুরি অবস্থা, ২০১৩–১৪ সালের দীর্ঘস্থায়ী অবরোধ ও নির্বাচনী সহিংসতা—সবই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত হেনেছে। এর ফলে বহু বিনিয়োগ প্রকল্প স্থগিত হয়েছে, কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে এবং অনেকে বিনিয়োগ পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে।

যদিও গত কয়েক বছরে দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণ-অভ্যুত্থান, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ পেরিয়েছে, তবুও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুরোপুরি থেমে যায়নি। সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও জিডিপি বড় আঘাত পায়নি এবং মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্থায়িত্ব দেখতে চান।

ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক শান্তি যেমন অপরিহার্য, তেমনি প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নজিরবিহীন আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটে, যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, বিশেষ পুলিশ বাহিনীর দুর্বল অবস্থান এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে দিচ্ছে না। দ্রুত নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হয়ে উঠেছে।

নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্ত অবস্থান তা নিয়ে সন্দেহ বাড়াচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অংশ নেবে না—এটা প্রায় নিশ্চিত। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অন্য দলগুলো তেমন সক্রিয় নয়। এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সরাসরি বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। জামায়াতের অনাগ্রহও স্পষ্ট।

তাকাও হিরোসে সতর্ক করেছেন—শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগকারী ভিত্তি ছাড়া বিদেশি মূলধনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বিপজ্জনক হতে পারে। তাঁর মতে, মূলধন বাজারকে আরও গভীর ও স্থিতিশীল করা জরুরি, যাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমলেও অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে।

বর্তমান রাজনৈতিক অবিশ্বাস ও পারস্পরিক দোষারোপ বিনিয়োগের পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। যেকোনো মুহূর্তে একটি অবরোধ, সংঘর্ষ বা বিতর্কিত আদালতের রায় বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত হানতে পারে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা কেবল স্থানীয় পরিস্থিতি নয়, বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমের খবরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন।

এই প্রেক্ষাপটে তিনটি পদক্ষেপ জরুরি—প্রথমত, রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ সুরক্ষায় আইনগত ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, বিদেশি পুঁজির পাশাপাশি শক্তিশালী দেশীয় বিনিয়োগ ভিত্তি গড়ে তোলা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাকাও হিরোসের সতর্কবার্তা তাই শুধু বিনিয়োগ নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে