ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

বিয়ের আগে ডা. তাসনিম জারার ৬ পরামর্শ

২০২৫ জুলাই ১৩ ১৬:১৮:১৯
বিয়ের আগে ডা. তাসনিম জারার ৬ পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিয়ে শুধু দুটি মানুষের বন্ধন নয়, বরং দুটি পরিবারের সংযোগও। তাই দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ কিছু রোগ আছে যেগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু বিয়ের পর তা একে অপরের মাঝে ছড়াতে পারে—এমনকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আক্রান্ত হতে পারে।

তাই বিয়ের আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল টেস্ট করানো কেবল ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যৎ সন্তানদের সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ‘সহায় হেলথ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম জারা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর জন্য ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার কথা তুলে ধরেছেন। চলুন, এক নজরে জেনে নেওয়া যাক:

১. থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ, যা বাবা-মায়ের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে পৌঁছাতে পারে।যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই বাহক হন, তাহলে ভবিষ্যৎ সন্তানের গুরুতর থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার (Hemoglobin Electrophoresis) মাধ্যমেই এটি শনাক্ত করা যায়।

ফলাফল অনুযায়ী কী বোঝা যায়:

দুজনই সুস্থ: চিন্তার কারণ নেই।

একজন বাহক: সন্তান থ্যালাসেমিয়া মাইনর হতে পারে (গুরুতর না)।

দুজনেই বাহক: সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মেজর হওয়ার ঝুঁকি ২৫%।

২. হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা

হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা লিভারে সংক্রমণ ঘটিয়ে সিরিয়াস জটিলতা ও ক্যানসার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তি জানতেও পারে না, কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।যৌন সম্পর্ক, রক্ত, বা জন্মের সময় শিশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

বিয়ের আগে দুজনকেই এই পরীক্ষাটি করা উচিত।

৩. হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়।একই ইনজেকশন বা চিকিৎসা যন্ত্র ব্যবহার করলে, জীবাণুমুক্ত না থাকলে এ রোগ ছড়াতে পারে।এটি ধীরে ধীরে লিভার নষ্ট করে, অথচ দীর্ঘদিন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।

বিয়ের আগেই হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়।

৪. এইচআইভি (HIV) পরীক্ষা

এইচআইভি একটি মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাস যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংস করে।এটি যৌন সম্পর্ক, রক্তের সংস্পর্শ, বা মায়ের বুকের দুধ থেকেও ছড়াতে পারে।বহু বছর উপসর্গহীন থাকতে পারে, কিন্তু অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।

সতর্ক থাকতে বিয়ের আগে এই পরীক্ষাটিও জরুরি।

৫. যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা

অনেক যৌনরোগ এমন আছে যা বাহ্যিকভাবে ধরা পড়ে না, তবে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণসহ নানা জটিলতা তৈরি করে।

সময়মতো অল্প কিছু অ্যান্টিবায়োটিকেই এসব রোগ সেরে যেতে পারে।

যে চারটি যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা করানো যেতে পারে:

সিফিলিস (Syphilis)

গনোরিয়া (Gonorrhea)

ক্লামেডিয়া (Chlamydia)

ট্রিকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis)

৬. ব্লাড গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর

বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর জানা খুব জরুরি, বিশেষ করে নারীর Rh নেগেটিভ হলে।স্বামীর রক্ত যদি Rh পজিটিভ হয়, তাহলে সন্তান গর্ভে থাকাকালীন Rh ইনকম্প্যাটিবিলিটি দেখা দিতে পারে।যা শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা বা প্রতিরোধমূলক ইনজেকশন দিলে বিপদ এড়ানো সম্ভব।

শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন মানসিক শান্তির ভিত্তি, তেমনি সুস্থ সম্পর্কেরও মূল। বিয়ের আগে এই ছয়টি পরীক্ষা করে নেয়া নিঃসন্দেহে একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত—যা ভবিষ্যৎ পরিবারকে রক্ষা করতে পারে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে।সুখী, সুস্থ দাম্পত্য জীবন শুরু হোক সচেতনতায়।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর



রে