ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ভারতে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য শঙ্কার খবর

২০২৫ জুলাই ১৩ ১১:১১:০৯
ভারতে বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য শঙ্কার খবর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতে বাংলায় কথা বললেই "বাংলাদেশি ট্যাগ" লাগানোর এই ঘটনা একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, অন্যদিকে এটি দুই দেশের সম্পর্ক এবং ভাষাগত পরিচয়ের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত প্রদান করছে।

এই ধরনের ঘটনার পেছনে কিছু সমাজিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে, যেমন:

১. ভাষাগত পরিচয়ের সংকট:

ভারতে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর এই ধরনের পদক্ষেপ, বিশেষত বাংলাদেশি ট্যাগ লাগানো, ভাষাগত পরিচয়ের এক ধরনের সংকটকে সামনে আনে। ভারতীয় সমাজে ভাষার মধ্যে একটি অদৃশ্য বিভাজন তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি তথা 'বিদেশি' হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এটি বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে বহু বছর ধরে একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে।

২. রাজনৈতিক প্রভাব:

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘটনায় বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বিশেষত বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি এবং ভাষার মধ্যে পার্থক্য আরও গভীর হচ্ছে। রাজ্যগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এখন ভাষার দিক থেকেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

৩. বাংলাদেশি ইস্যু এবং অভিবাসী সংকট:

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর "বাংলাদেশি" ট্যাগ লাগানো ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং অভিবাসন সমস্যাকে আরও তীব্র করেছে। গত কয়েক বছরে আসামে এবং অন্যান্য রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য ছিল, যা সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

৪. ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্ন:

বাংলাদেশি ট্যাগের মাধ্যমে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য যে, "যারা বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে দাবি করবেন, তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে"—এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত সংকটের সূচনা হতে পারে। এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা বা তিরস্কারও হতে পারে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

৫. রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ:

ওড়িশায় সাড়ে ৩০০ ব্যক্তির আটক, দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকায় বাঙালি পাড়ার পানির ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ইত্যাদি এই পরিস্থিতির একক দৃষ্টান্ত মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের পর, পুরো বিষয়টি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারতে এই ধরনের ঘটনাগুলির মধ্যে একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত থাকতে পারে:

সমাজের অস্থিরতা: ভারতীয় সমাজে এমন ঘটনাগুলো অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্মানিত হওয়া উচিত, না যে, বিভাজনের উৎস হয়ে দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক সুবিধাবাদ: কিছু রাজনৈতিক দল এই ধরনের ইস্যুতে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে, এবং এটি স্থানীয় নির্বাচনের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

অর্থনৈতিক অভিবাসন: বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ইস্যু হয়তো এই ধরনের পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে। বাংলাদেশী মানুষ ভারতে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে যান, যা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত।

এই পুরো পরিস্থিতি যে শুধু ভাষা বা জাতিগত পরিচয়ের বিষয় নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নও তৈরি করছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে