ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটছে কারসাজি চক্র

২০২৫ এপ্রিল ২৭ ১৭:৩৫:৫৫
বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটছে কারসাজি চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘ সময় ধরে এক ধরনের অস্বাভাবিক নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পতনের পেছনে কোনো সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক বা মৌলিক কারণ না থাকলেও, বাজারে প্রতিনিয়ত সূচকের পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে ব্যাপক হতাশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিজেদের কষ্টার্জিত পুঁজি হারিয়ে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

বাজার বিশ্লেষক ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এই অস্বাভাবিক বাজারচিত্রের পেছনে রয়েছে কিছু অসাধু গোষ্ঠীর কৌশলী কারসাজি। তারা পরিকল্পিতভাবে বাজারে আতঙ্ক তৈরি করে প্যানিক সেলিং ঘটাচ্ছে—অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এমনভাবে প্রভাবিত করছে যাতে তারা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই শেয়ারগুলো কম দামে কিনে নিয়ে পরবর্তীতে নিজেরা বড় ধরনের মুনাফা অর্জন করা।

এই গোষ্ঠী বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন বাজার আর ঘুরে দাঁড়াবে না। ফলে যারা বাজার সম্পর্কে কম জানেন, তারা হতাশ হয়ে বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতি অনেক সময় কৃত্রিম এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে। বাজারের প্রকৃত মৌলিক চিত্র সবসময় এতটা নেতিবাচক নয় যতটা দেখানো হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু গেম্বলার বা জুয়াড়ী প্রকৃতির বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ধরেই বাজারে নানা রকম গেম খেলে আসছে। তারা চক্রাকারে বাজারকে প্রভাবিত করে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরই বেশি ক্ষতির শিকার হতে হয়। কারণ তারা না জেনে, না বুঝে, আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতি বিশেষ পরামর্শ হচ্ছে—এই গেম্বলারদের ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য সহকারে বিনিয়োগ ধরে রাখা। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাজার বিশ্লেষণ করা এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতাদের মতামত নেওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজার একটি সময়ভিত্তিক খেলা নয়—এটি একটি ধৈর্য ও কৌশলের জায়গা।

এই গেম্বলারদের মূল লক্ষ্যই হলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নাজেহাল করে নিজেরা লাভবান হওয়া। যদি সবাই আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ তুলে নেন, তাহলে তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাবে। আর যদি আমরা ধৈর্য ধরতে পারি, তাহলে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না এবং বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সরে দাঁড়াবে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। বাজার চক্রাকারে চলে—পতনের পর উত্তরণ আসেই। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের উচিত, আতঙ্ক নয় বরং সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া। গুজবে কান না দিয়ে, মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

শেয়ারবাজার গেম্বলিংয়ের জায়গা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সৃষ্টির ক্ষেত্র হিসেবে দেখলেই এক সময় এই অসাধু গোষ্ঠী বাজার থেকে দূর হয়ে যাবে। তখন প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই লাভবান হবেন।

মনিরুজ্জামান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে