ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কর্মকর্তাদের কাণ্ডে বিব্রত প্রশাসন

২০২৩ অক্টোবর ১০ ১১:০৩:৪৯
কর্মকর্তাদের কাণ্ডে বিব্রত প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাঠ প্রশাসনসহ অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-নারী কেলেঙ্কারির মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, পারিবারিক সমস্যাও উঠে আসছে অভিযোগে। মাঠ প্রশাসনের ইউএনও ও এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ থাকলেও বাদ নেই এডিসি, ডিসি, মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, উপসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। অনেকেই আচরণবিধি মানছেন না এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন বা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।

এ কারণে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অন্য কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ বাড়ছে। অভিযোগের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। তবে দিন দিন অভিযোগ বাড়তে থাকায় বিব্রত হচ্ছে প্রশাসন।

জানা গেছে, কর্মকর্তাদের নামে প্রতি মাসেই প্রায় শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে জনপ্রশাসনে। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গড়ে ২০-২৫টি অভিযোগ জমা পড়ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৬৪টি অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্তাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্রায় ২ হাজার ৩৮৮টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, এসব অভিযোগ তদন্ত করে মাত্র ২২৭ কর্মকর্তার নামে বিভাগীয় মামলা হয়। মামলায় কেউ লগুদণ্ড, কেউ গুরুদণ্ড পেয়েছেন। আবার অনেকের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ফাইল নিষ্পন্ন করা হয়। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২২২টি অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয় ২৫টি, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৪৬টি অভিযোগে ২৩টি, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২১৬টি অভিযোগে ২৪টি, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১৯৯টি অভিযোগে ৩৫টি, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৭৫টি অভিযোগে ২২টি, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৯২টি অভিযোগে ১৪টি বিভাগীয় মামলা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অভিযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি ৪৮৪ তবে মামলা ছিল ৭টি।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৪৭টি অভিযোগে ১৪টি, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৬০টি অভিযোগে ১৬টি, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৫১টি অভিযোগে ২০টি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৫৭টি অভিযোগে ১২টি এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৩৯টি অভিযোগে ১৫টি বিভাগীয় মামলা হয়। এ ছাড়াও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ২৪টি অভিযোগে দুটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মাঠ প্রশাসনের অভিযোগ জনপ্রশাসনে আসলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিষয় সেই মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে জনপ্রশাসনে গত এপ্রিলে ৯৭টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে দুটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মে মাসে ৮০টি অভিযোগে দুটি, জুন মাসে ১২৬টি অভিযোগে ৪টি বিভাগীয় মামলা হয়। জুলাই মাসে ৬১টি অভিযোগে দুটি মামলা এবং আগস্ট মাসে ১০৭টি অভিযোগ জমা পড়ে এবং দুটি মামলা হয়।

গত আগস্ট পর্যন্ত ২৮টি চলমান বিভাগীয় মামলা রয়েছে। প্রতি মাসেই দুটি থেকে ৩টি বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।

আমাদের কাছে আসা কোনো আবেদন ফেলে রাখি না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিন উল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে করা হয়।

এদিকে, অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়া, প্রভাব খাটিয়ে, তদবির করে অনেক ক্ষেত্রেই গুরুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে সংশ্লিষরা বলছেন, অভিযোগের বেশির ভাগই তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় শাস্তি হচ্ছে কম। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে তাদের শাস্তি হচ্ছে।

মাঠ প্রশাসনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কোনটি বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে, ডিসি অফিস থেকে আবার কোনটি মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত হয়। তদন্ত করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো অভিযোগ ঝুলিয়ে রাখা হয় না। তিনি জানান, কর্মকর্তাদের শাস্তির ক্ষেত্রে লঘুদণ্ড আছে, গুরুদণ্ড আছে। অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের কোনো অপরাধ ব্যক্তি বিবেচনায় দেখা হয় না। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি জামালপুরের ডিসিকে মাঠ থেকে উঠিয়ে আনা হলো কিন্তু তিনি সরকারের পক্ষে বলেছে। এখানে আমরা দেখেছি ওই ডিসির নিরপেক্ষ জায়গায় সেটি ভঙ্গ করেছে এবং সরকার বিব্রত হয়েছে। আমরা নিয়ম মেনে তাকে উঠিয়ে এনেছি। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারাই জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শেয়ারনিউজ, ১০ অক্টোবর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে