ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নতুন প্রকল্প পেয়েও প্রচন্ড আর্থিক চাপে মীর আখতার

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ০৭:০১:৩৫
নতুন প্রকল্প পেয়েও প্রচন্ড আর্থিক চাপে মীর আখতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মীর আখতার হোসেন লিমিটেড লালমনিরহাটে নতুন সরকারি প্রকল্প পেয়েছে। তবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চরম আর্থিক চাপের মুখে রয়েছে, কারণ সরকারি প্রকল্পগুলোর বিল সময়মতো না পাওয়ায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর কোম্পানিটিকে ১৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার যে নতুন কাজটি দেওয়া হয়েছে, তাতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, সোলার পাওয়ার স্থাপন, সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ–কালভার্ট নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পটির মেয়াদ ২৪ মাস। নতুন এই কাজ কিছুটা স্বস্তি দিলেও তা সামগ্রিক সংকট কাটানোর জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মীর আখতারের রাজস্ব কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকায়, যা আগের তুলনায় ৭৫ শতাংশ কম। নিজস্ব নির্মাণ কার্যক্রম কমে যাওয়ায় এই পতন হয়েছে। এ সময়ে এককভাবে নির্মাণ ইউনিটে কোম্পানিটি ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লোকসান করে। তবে যৌথ প্রকল্পের আয় বিবেচনায় কোম্পানিটি ২ কোটি টাকা নিট মুনাফা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

এর আগের অর্থবছরেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানির রাজস্ব অর্ধেকে নেমে আসে ১৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়, আর নিট মুনাফা কমে ২০ কোটি টাকা। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হলেও তা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম।

কোম্পানির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, দেশের অবকাঠামো খাত বর্তমানে বড় ধরনের মন্থরতায় রয়েছে। বড় প্রকল্প অনুমোদন কার্যত বন্ধ এবং ছোট প্রকল্প চালু হলেও তা বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার সামাল দেওয়ার মতো নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—চলমান প্রকল্পের বিল পরিশোধ বন্ধ থাকায় কোম্পানির তারল্য সংকট তীব্রতর হচ্ছে। এতে রাজস্ব ও মুনাফা উভয়ই কমে গেছে এবং প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মীর আখতার বর্তমানে ২১টি প্রকল্পে কাজ করছে, যার সম্মিলিত মূল্য ৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে রয়েছে সাসেক ঢাকা–সিলেট করিডোর উন্নয়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, দুল্লা মারি রোড–টাঙ্গাইল চার লেন, কক্সবাজারের ৭.৩৫ কিমি সড়ক নির্মাণ, যমুনা ব্রিজ–হাটিকামরুল মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ওসমানী ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে–ট্যাক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণ। এসব বড় প্রকল্পে নিয়মিত বিনিয়োগ প্রয়োজন, কিন্তু বিল বিলম্বের কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান কঠিন হয়ে পড়ছে।

কোম্পানিটি তহবিল সংগ্রহে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তেমন সাফল্য পায়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৫০ কোটি টাকার প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব শেয়ারহোল্ডাররা অনুমোদন করলেও বিএসইসি অনুমোদন দেয়নি। তার আগের এপ্রিল মাসে ৩০০ কোটি টাকার করপোরেট বন্ড ইস্যুর পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যায়। ২০২২ সালে কোম্পানিটি ২৫০ কোটি টাকার জিরো-কুপন বন্ড ইস্যু করেছিল এবং ২০২০ সালে আইপিওর মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা তুলেছিল—যার শেয়ারমূল্য ছিল ৬০ টাকা। বর্তমানে সেই শেয়ারের দাম অর্ধেকেরও কম, যা সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সায়।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে