ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বেক্সিমকোর ছয় কারখানা নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক

২০২৫ নভেম্বর ২৪ ০০:২৪:২২
বেক্সিমকোর ছয় কারখানা নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেক্সিমকোর সমস্যাগ্রস্ত কারখানাগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার আন্তর্জাতিক লিজ চুক্তির উদ্যোগ নিলেও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি কারখানা নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হাজারো শ্রমিকের চাকরি রক্ষা এবং দেশের রপ্তানি আয় বজায় রাখার সরকারি প্রচেষ্টার বিপরীতে জনতা ব্যাংকের এই দ্রুত সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ে তৈরি হওয়া দোটানাকে স্পষ্ট করেছে।

গত ২০ নভেম্বর জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর এই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল এবং মূল আলোচ্যসূচি ছিল বেক্সিমকো, জনতা ব্যাংক এবং জাপানের রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড–এর মধ্যে লিজ চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা। কিন্তু সভা স্থগিত করে আলোচ্যসূচি পরিবর্তন করা হয় এবং নিলামের সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বৈঠক শেষ হওয়ার পরদিনই ব্যাংকটি গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে থাকা তিনটি কারখানার বন্ধকি সম্পত্তি—১৯৩ শতাংশ জমি ও সব স্থাপনা—নিলামে তোলার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাকী তিন কারখানার নিলাম বিজ্ঞপ্তিও শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

১ নভেম্বর প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে এই কারখানাগুলোর বিশাল অঙ্কের ঋণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেডের (ইউনিট-১ ও ২) মূল ঋণ ৫৪৩.৭ কোটি টাকা, যা সুদসহ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার৭৫৪.৭ কোটি টাকা। আরবান ফ্যাশন্সের ২৫২.৪৫ কোটি টাকা ঋণ সুদসহ দাঁড়িয়েছে ৭২৪.২৬ কোটি টাকা, এবং অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের ২৫১.২৬ কোটি টাকা ঋণ সুদসহ দাঁড়িয়েছে ৮১৬.৪ কোটি টাকা। এই তিনটি কারখানার যন্ত্রপাতি, মজুত পণ্য, জমি ও স্থাপনা নিলামে তোলা হবে। এছাড়াও, পরবর্তীতে ক্রিসেন্ট ফ্যাশনস (১ হাজার ৩৯৭ কোটি), অ্যাসেস ফ্যাশন (১ হাজার ১৩৫ কোটি) এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (১ হাজার ৩১৬ কোটি) বন্ধকি সম্পত্তিও নিলামে তোলা হবে।

এদিকে, হাজারো শ্রমিকের চাকরি রক্ষা ও রপ্তানি আয় বজায় রাখতে শ্রম মন্ত্রণালয় বেক্সিমকোর আন্তর্জাতিকমানের টেক্সটাইল কারখানাগুলো পুনরায় চালুর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এ লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষদের নিয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের মে মাসে জাপানের রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড কারখানাগুলো লিজ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়ে সরকারের কাছে ইওআই জমা দেয়, যেখানে বেক্সিমকো সমর্থন জানায়।

পরবর্তীতে সরকার মিলগুলো চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেয় এবং ২২ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয় প্রথম বৈঠক করে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে গঠিত ১১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি এবং আরেক পাঁচ সদস্যের কমিটিও এই রিভাইভাল–এর প্রস্তাবে সমর্থন দেয়। লিজ চুক্তির খসড়ায় জানানো হয়েছিল যে, রিভাইভাল শুরুতে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়াতে চায়। চুক্তির শর্ত ছিল—রিভাইভাল কারখানা পরিচালনা করবে, রপ্তানি আয়ের ১.৫%-২.৫% কমিশন নেবে এবং বাকি অর্থ পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে জনতা ব্যাংকসহ ঋণদাতাদের পরিশোধে ব্যবহার হবে; তবে বেক্সিমকো সরাসরি কোনো অর্থ পাবে না। ৮ অক্টোবর এই লিজ চুক্তির খসড়া তৈরি হয় এবং ১৮ নভেম্বর বোর্ড অনুমোদনের কথা ছিল, কিন্তু সভা পিছিয়ে ২০ নভেম্বর করা হয় এবং আলোচনা ঘুরে যায় নিলাম পরিকল্পনার দিকে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে