ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আইপিও মূল্যের অর্ধেকে নেমে এসেছে এনার্জিপ্যাকের শেয়ারদর

২০২৫ নভেম্বর ২৪ ০০:১৫:০৩
আইপিও মূল্যের অর্ধেকে নেমে এসেছে এনার্জিপ্যাকের শেয়ারদর

নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অন্যতম কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন পিএলসি বর্তমানে তীব্র আর্থিক সংকটে জর্জরিত। ক্রমাগত লোকসানের কারণে কোম্পানিটি নেতিবাচক বা ঋণাত্মক সঞ্চিত আয়ে তলিয়ে যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩০৬ কোটি টাকা লোকসান জমে যাওয়ায় কোম্পানিটির সঞ্চিতি আয় এখন ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ কোটি টাকা নেগেটিভ।

এই আর্থিক অবনতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) আরও প্রকট হয়েছে। এই সময়ে কোম্পানির রাজস্ব ৩৫ শতাংশ কমে ৬০ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় নেমে আসে এবং প্রান্তিক শেষে নিট লোকসান হয় ৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে পৌঁছানোয়, রোববার (২৩ নভেম্বর) ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৭.৯৫ শতাংশ কমে ১৬ টাকায় ২০ পয়সায় লেনদেন শেষ করে। এটি কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মূল্য থেকে অনেক নিচে।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সে সময় বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল ৩৫ টাকা, আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছিলেন ৩১ টাকায়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি তাদের মূল্যের অর্ধেকেরও বেশি হারিয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির পুনর্মূল্যায়নসহ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৮৬ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম।

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিবৃতিতে এনার্জিপ্যাক জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কারণে ফিন্যান্স চার্জ তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়াই এই লোকসানের প্রধান কারণ। কোম্পানিটি আরও উল্লেখ করেছে যে, শিল্পের সামগ্রিক রাজস্ব ক্ষয়, ক্রমবর্ধমান আর্থিক ব্যয় এবং পুরাতন ঋণের দায়ভারের সম্মিলিত ফলেই অস্থায়ী নেতিবাচক সঞ্চিতি আয় এবং এনএভি কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

তবে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আশার আলো দেখিয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) থেকে সম্প্রতি ১০ বছর মেয়াদি একটি পুনর্গঠিত ফিন্যান্সিং সুবিধা পেয়েছে, যার মধ্যে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে। এই সুবিধার ফলে ঋণ পরিশোধের চাপ কমবে এবং এটি সঞ্চিতি আয় পুনরুদ্ধার ও এনএভি বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোম্পানিটির অ-নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত মোট মেয়াদি ঋণের বোঝা ছিল ১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এর প্রধান ঋণদাতা হলো মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।

তারল্য ও পরিচালন চাহিদা মেটাতে কোম্পানিটির পর্ষদ সম্পদ বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। পর্ষদ সম্প্রতি তেজগাঁও শিল্প এলাকার ১৬.৫০ ডেসিমেল জমি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে ৫৯৭ ডেসিমেল জমি ১৯ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল।

ঐতিহাসিক কর্মক্ষমতার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২ ১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব ২ হাজার ৩৩ কোটি টাকায় পৌঁছলেও অর্থবছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮০০ কোটি টাকায় এবং অর্থবছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮০ কোটি টাকায় নেমে আসে। অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে ৩০৮ কোটি টাকা হয়েছিল। মুনাফার দিক থেকেও চরম পতন দেখা যায়; ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা মুনাফা করার পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৫ কোটি টাকা লোকসান হয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ কোটি টাকায়।

বর্তমানে জি-গ্যাস ব্র্যান্ডের অধীনে এলপিজি, নির্মাণ সামগ্রী, জেএসি-ব্র্যান্ডের মোটরযান এবং তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে এনার্জিপ্যাক রাজস্ব আয় করে। তবে রাজস্ব ক্ষয়ের একটি বড় অংশ এসেছে কৌশলগত পুনর্গঠনের কারণে। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র—এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চার চিটাগং লিমিটেড এবং ইপিভি ঠাকুরগাঁও লিমিটেড—থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আসত, যা পরে কোম্পানির পরিচালকদের মালিকানাধীন সোনারগাঁও লেদার ও রেক্সিন ক্লথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোম্পানিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই হস্তান্তরই রাজস্ব কমে যাওয়ার মূল কারণ। পাশাপাশি সরকারি চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানিটির মূল ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা, অর্থাৎ ট্রান্সফরমার বিক্রিও কমে গেছে। একই সময়ে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগে তীব্র পতন ঘটায় বিদ্যুৎ সরঞ্জাম বিক্রিতেও আঘাত লেগেছে। এরফলে, এনার্জিপ্যাক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মাত্র ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করেছে, যা তারল্য সংকটের চিত্র তুলে ধরে। ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অর্থবছর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘোষিত ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ বিতরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ডিএসই এনার্জিপ্যাক পাওয়ারকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়। তবে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ডিভিডেন্ড বিতরণের পর ডিএসই এটিকে আবার ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফিরিয়ে আনে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে