ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত শুরু

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১১:০৫:২৫
ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আনীত গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ছয়জন সাবেক স্পন্সর পরিচালকের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন সম্পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বজায় রেখে অপ্রকাশিত স্থান থেকে অবৈধভাবে কোম্পানিটি পরিচালনা করছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সালিম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দিন। এই কমিটির ওপর নথিপত্র পর্যালোচনা করে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগকারী সাবেক পরিচালকদের মতে, সাঈদ খোকন ২০১২ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কোম্পানিতে স্বৈরাচারী চর্চা শুরু হয়। তারা জানান, কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই তাদের ছয়জন সাবেক স্পন্সর পরিচালককে বোর্ড থেকে অপসারণ করা হয়। তাদের স্থানে চেয়ারম্যান তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, শ্যালিকা এবং তার নিজস্ব দুটি কোম্পানিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করেন। বর্তমানে পারিবারিক-সম্পর্কিত পরিচালকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশজনে, যারা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৩০.৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের অভিযোগ, এই পারিবারিক কেন্দ্রীভূত শেয়ারহোল্ডিং এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো কোম্পানি আইন, বীমা আইন এবং সিকিউরিটিজ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন একটি অপ্রকাশিত স্থানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকেই তিনি কোম্পানির মিটিং পরিচালনা করছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। সাবেক পরিচালকরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ করপোরেট গভর্নেন্স নীতি এবং কোম্পানি ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তারা আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানির সচিব ও পরিচালক নুর মোহাম্মদ মামুন চেয়ারম্যানকে এই একতরফা সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছেন, যা কার্যত এই অনিয়মগুলোকে সমর্থন করেছে।

এছাড়াও, সাবেক পরিচালকদের দাবি, চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামতো কোম্পানির সিইও, সিএফও এবং কোম্পানি সচিবকে নিয়োগ ও অপসারণ করেন এবং এই সিদ্ধান্তগুলো বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরণীতে রেকর্ড করা হয়। যে পরিচালকই আপত্তি তোলেন, তাকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সাবেক পরিচালকরা জানান, তাদের অপসারণের কারণ এখনও অজানা এবং বারবার কারণ জানতে চেয়েও কোনো উত্তর মেলেনি, যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ।

অভিযোগকারীদের মতে, ইসলামী ইনস্যুরেন্সের এই অনিয়মগুলো সামগ্রিকভাবে বীমা খাতের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। তারা বিএসইসিকে অনুরোধ করেছেন যেন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে, কোনো আইনি লঙ্ঘন পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অন্যায়ভাবে অপসারণ করা পরিচালকদের পুনর্বহাল করা হয় এবং বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, করপোরেট গভর্নেন্স ফিরিয়ে আনা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

তবে করপোরেট গভর্নেন্স নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, ইসলামী ইনস্যুরেন্সের আর্থিক সূচকগুলো মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের ৫২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার তুলনায় সামান্য কম। এর বিপরীতে নিট প্রিমিয়াম ৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা হয়েছে। কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১ লাখ টাকা, যা গত বছরের ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রায় কাছাকাছি।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৯৪ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ২২ টাকা ৫৭ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২২ টাকা ৫৬ পয়সা।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে