ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

এক ঘুমন্ত দৈত্য, জেগে উঠলেই আসতে পারে মহাবিপর্যয়

২০২৫ অক্টোবর ২০ ১৫:৪০:৫৩
এক ঘুমন্ত দৈত্য, জেগে উঠলেই আসতে পারে মহাবিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীর বুকে ঘুমিয়ে থাকা এক সুবিশাল প্রাকৃতিক দৈত্য হলো ইয়েলোস্টোন সুপারভলক্যানো, যা যেকোনো মুহূর্তে জেগে উঠে সমগ্র মানবসভ্যতাকে বিলুপ্ত করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের গভীরে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরিটি, অন্য সাধারণ আগ্নেয়গিরির তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক প্রাকৃতিক ঘুমন্ত দৈত্য হিসেবে পরিচিত।

ইয়েলোস্টোনে কোনো বিশাল পর্বতের মতো গঠন নেই, বরং এটি একটি বিশাল ক্যালডেরা বা গর্তের মতো, যার ব্যাস প্রায় ৭০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। বাইরে থেকে দেখতে জায়গাটি সবুজে ঢাকা বনভূমির মতো মনে হয়, যেখানে গাছপালা, রদ আর গিজারে ভরা এক সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিচে লুকিয়ে আছে এক মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, একটি সুপারভলক্যানোর শক্তি এতটাই বেশি যে তা কয়েক হাজার কিলোমিটার জুড়ে ছাই, গ্যাস এবং লাভা ছড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে পৃথিবীর আবহাওয়া ও পরিবেশ পাল্টে যেতে পারে। বিবিসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইয়েলোস্টোনে বড় আকারের অগ্ন্যুৎপাত হলে তা ১৯৮০ সালের মাউন্ট সেন্ট হেলেন্সের অগ্ন্যুৎপাতের চেয়ে কমপক্ষে ৮০ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হবে।

ইয়েলোস্টোন সুপারভলক্যানো থেকে নির্গত ছাই ও গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে সূর্যের আলো আটকে দেবে, ফলে বিশ্বজুড়ে নেমে আসবে ভয়াবহ শীত, যা 'ভলক্যানিক উইন্টার' নামে পরিচিত। এর কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমে যাবে, ফসল নষ্ট হবে, খাদ্য সংকট দেখা দেবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। নাসার বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এমন অগ্ন্যুৎপাত হলে মানুষসহ পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ প্রাণীকুল মারা পড়বে।

ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৭০ সালে, যখন মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিকরা এই অঞ্চলের অস্বাভাবিক ভূ-তাপীয় কার্যকলাপ, গরম পানির ঝরনা, গিজার ও সালফার নির্গমন পর্যবেক্ষণ করেন। পরে গবেষণায় জানা যায়, এর নিচে বিশাল এক ম্যাগমা চেম্বার বা লাভার মজুদ রয়েছে, যা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং, মন্টানা ও আইডাহো অঙ্গরাজ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। গবেষকরা জানান, ইয়েলোস্টোন শেষবার ফেটে পড়েছিল প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার বছর আগে। এর আগেও আরও দুটি বিশাল অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল প্রায় ১৬ লাখ ও ২১ লাখ বছর আগে। ভূ-তাত্ত্বিকদের হিসাবে, এই আগ্নেয়গিরি প্রায় প্রতি ৬ থেকে ৭ লাখ বছর পরপর জেগে ওঠে। সেই হিসাবে, আমরা ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক সময়ে রয়েছি।

তবে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্যমতে, নিকট ভবিষ্যতে ইয়েলোস্টোনে কোনো অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকি নেই। বিজ্ঞানীরা নিয়মিতভাবে সেখানকার ভূমিকম্প, তাপমাত্রা ও গ্যাস বের হওয়া পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এখন পর্যন্ত বড় কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।

ইয়েলোস্টোনই একমাত্র সুপারভলক্যানো নয়। পৃথিবীতে আরও কয়েকটি সক্রিয় সুপারভলক্যানো রয়েছে, যেমন- ইতালির ক্যাম্পি ফ্লেগেই, ইন্দোনেশিয়ার টোবা, নিউজিল্যান্ডের টাউপো এবং জাপানের আইরা ক্যালডেরা। এদের প্রত্যেকটি পৃথিবীর জন্য সম্ভাব্য বিপর্যয়ের উৎস। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার টোবা আগ্নেয়গিরি প্রায় ৭৪ হাজার বছর আগে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে পৃথিবীর জলবায়ু ঠাণ্ডা করে দিয়েছিল প্রায় ১০০০ বছরের জন্য এবং মানবজাতির সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে এসেছিল মাত্র কয়েক হাজারে।

বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেন যে, এসব সুপারভলক্যানো হঠাৎ করে সক্রিয় হয় না, বরং ধীরে ধীরে হাজার বছরের ভূ-গর্ভস্থ পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একদিন তা জেগে ওঠে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে