ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

মার্জিন ঋণের ফিসফাসেই ৫২০০-এর নিচে সূচক!

২০২৫ অক্টোবর ১৫ ২১:২২:২৮
মার্জিন ঋণের ফিসফাসেই ৫২০০-এর নিচে সূচক!

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা পাঁচ দিন ধরে চলা রক্তক্ষরণের পর শেয়ারবাজারে মাত্র একদিনের যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছিল, বুধবার (১৫ অক্টোবর) তা আবারও চরম আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। বাজারে ছড়িয়ে পড়া মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনের গুঞ্জন যেন বিনিয়োগকারীদের স্নায়ুতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। এই গুজবে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়াতে একের পর এক শেয়ার বিক্রি করতে থাকে। এর ফলে এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৮১ পয়েন্টের বেশি হারিয়ে ৫ হাজার ১৬২ পয়েন্টের অতল গহ্বরে নেমে আসে—যা ছিল দিনের সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র।

বুধবার দিনের শুরুতে বাজারে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা গিয়েছিল, যা বিনিয়োগকারীদের মনে ক্ষণিকের আশা জাগায়। প্রথম দেড় ঘণ্টায় সূচক বেড়ে ৫ হাজার ২০৬ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেলেও, সেই ইতিবাচক ধারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। দিনের শেষ দিকে 'প্যানিক সেলিং'-এর চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে, শেষ পর্যন্ত সূচক ফের লাল চিহ্নেই শেষ হয়। আগের দিন সূচক কমেছিল ৩০ পয়েন্ট, তবে বিক্রির চাপে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬০৬ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৬ কোটি টাকা বেশি। এই বর্ধিত লেনদেনই বাজারের তীব্র বিক্রয়চাপকে নির্দেশ করে।

শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে এখন এক ধরনের তীব্র ভীতি কাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বিএসইসি যেকোনো দিন এই মার্জিন ঋণ বিধিমালা পাস করতে পারে। আর সেই আশঙ্কাতেই অনেকেই ঝুঁকি এড়াতে আগেভাগে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিধিমালা সংশোধনের ফলে হঠাৎ অনেক শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফলে যেসব শেয়ারে ইতিমধ্যে ঋণ দেওয়া আছে, সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে। এতে বিক্রির চাপ বাড়বেই।”

আসন্ন এই বিধিমালার সংশোধিত খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে—কেবল ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার যেগুলোর পিই রেশিও ৩০-এর নিচে এবং ফ্রি-ফ্লোট বাজারমূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা, সেগুলোই মার্জিন ঋণযোগ্য হবে। অর্থাৎ, ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মার্জিন ঋণ অযোগ্য থাকবে। এমনকি ‘এ’ ক্যাটেগরির হলেও, পিই রেশিও বেশি বা বাজারমূলধন কম হলে সেগুলোও ঋণযোগ্য হবে না। এতে বাজারের বেশিরভাগ শেয়ার হঠাৎই অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক সিইও বলেন, “বাজার এখন নীতিগত ধোঁয়াশায় ভুগছে। বিনিয়োগকারীরা জানেন না—এই পরিবর্তন তাদের জন্য লাভজনক হবে নাকি বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “বিএসইসির লক্ষ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তাড়াহুড়ো করে বিধিমালা পাসের মাধ্যমে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে চাই না আমরা।” তিনি আরও জানান, নতুন নীতিমালার ফলে যেসব শেয়ার মার্জিন ঋণের আওতার বাইরে যাবে, সেগুলো সমন্বয়ের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মার্জিন ঋণ বিধিমালার সংস্কার বাজারে স্বচ্ছতা আনলেও, যোগাযোগ ও সময়োপযোগী ব্যাখ্যার অভাবেই এই আতঙ্ক বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বিএসইসিকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে—এই সংশোধন কার জন্য, কীভাবে উপকার আনবে, আর কখন কার্যকর হবে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে