ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

শীঘ্রই মৃত্যুদণ্ডের রায় আসতে পারে শেখ হাসিনার

২০২৫ অক্টোবর ১৮ ১১:৫৬:২৫
শীঘ্রই মৃত্যুদণ্ডের রায় আসতে পারে শেখ হাসিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন।

প্রসিকিউশনের দাবি, দমন অভিযানের সময় নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসনের শেষ দিকে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

এই আন্দোলনের সূচনা হয় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যে তা দেশের সর্বত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বড় আন্দোলনে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। একই দিনে ঢাকার একটি ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাপক ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগও ওঠে, যার মধ্যে শিশুদের গুমের ঘটনাও রয়েছে।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তাদের দলে রয়েছে ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ ও সাক্ষ্য, যা সরাসরি শেখ হাসিনাকে হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে। তিনি বলেন, “আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।”

আদালত ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালিয়েছেন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, “শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, “তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। তিনি এক কঠোর অপরাধী এবং তার বর্বরতার জন্য কোনো অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি।”

রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা হতে পারে।

দোষী প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, যা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার জবাবে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।

শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও চলছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে