ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

ভারতের বিপদে বাংলাদেশের ‘সোনার সময়’ শুরু

২০২৫ আগস্ট ০৯ ১০:৫৭:৪২
ভারতের বিপদে বাংলাদেশের ‘সোনার সময়’ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ায় বিশ্ববাণিজ্যে নতুন মোড় নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত—যার ওপর এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে মোট ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক রয়েছে (আগের ১৫ শতাংশসহ মোট ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল, পরে কমে ২০ শতাংশে এসেছে)। তবে ভারতের ওপর শুল্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, একই ধরনের বেসিক গার্মেন্টস (যেমন টি-শার্ট) রপ্তানিতে এই বাড়তি শুল্ক ভারতের রপ্তানি ব্যয় বাড়াবে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বায়াররা বাংলাদেশমুখী হতে পারেন।

এদিকে পাকিস্তানের ওপর শুল্ক ১৯ শতাংশ, আর বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনের মতো দেশেরও শুল্কহার ২০ শতাংশের আশপাশে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া—এই তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের পোশাক রপ্তানি করে। যেহেতু তাদের ওপর শুল্কহার একই, তাই তারা এখন প্রতিযোগিতায় সমান অবস্থানে রয়েছে। তবে ভারতের ওপর শুল্ক বাড়ায় বাংলাদেশ একধাপ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছে।

ড. মাহফুজ কবির, গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস), বলেন: "২০১৪ সালেও বাড়তি অর্ডার পেয়ে প্রস্তুতির অভাবে তা বাংলাদেশ নিতে পারেনি। এবার যেন তেমন না হয়। ভারতের শুল্ক ৫০ শতাংশ হওয়ায় বায়াররা বিকল্প খুঁজবে, আর সেটি হতে পারে বাংলাদেশ।"

বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন:“প্রথমে শুল্ক ঘোষণার পর বায়াররা থমকে গিয়েছিল, অর্ডার স্থগিত করেছিল। এখন আবার অর্ডার চালু হয়েছে। তবে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে পোশাকের দাম বাড়বে, ফলে চাহিদা প্রাথমিকভাবে কিছুটা কমেছে।”

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে বড় দরকষাকষি শুরু হবে বায়ার ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে। কারণ খরচ কমানো যাবে না, ফলে মুনাফা কমে যাবে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান,“ভারতের শুল্ক এখন অনেক বেশি। ভিয়েতনামের শুল্ক আমাদের সমান হলেও তাদের একটি বড় সমস্যা হলো—তারা অধিকাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আনে। ফলে সেখানে বিধিনিষেধ পড়বে।”

তিনি সতর্ক করেন, সরকার যদি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ঋণ সহায়তা না দেয়, তাহলে এই সুযোগ বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারবে না।

চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল রপ্তানি করলেও আমদানি খুবই কম।রপ্তানি: ৯৯১ মিলিয়ন ডলার (প্রায়),আমদানি: ২৯০ মিলিয়ন ডলার,বাণিজ্য ঘাটতি: প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার

২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে মাত্র ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তাদের ফিনিশড পণ্য ও কাঁচামাল রপ্তানি বাড়াতে। এর অংশ হিসেবে গম, সয়াবিন, তুলা, এলএনজি আমদানি হচ্ছে, বোয়িংয়ের ২৫টি বিমান ক্রয়চুক্তির আলোচনা চলছে, স্টারলিংকও বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নন-ডিসক্লোজার শুল্ক চুক্তি করছে বাংলাদেশ, যার বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন:"শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, বা মুনাফা কমবে। তাই দক্ষতা বাড়াতে হবে। শুধু সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভর করলে চলবে না।"

তিনি পরামর্শ দেন, শুল্ক কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালাতে হবে এবং পোশাকের বাইরে বিকল্প বাজার ও পণ্য খুঁজতে হবে।

তৈরি পোশাকই বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৪ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক (১৮%)

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭৩৪ কোটি ডলারের

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতেও যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহৎ বাজার (২৩%)

ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশের জন্য অস্থায়ীভাবে এক ‘গোল্ডেন উইন্ডো’ তৈরি করেছে। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে প্রস্তুতি, দক্ষতা, অবকাঠামো এবং নীতিগত সহায়তা জরুরি। নয়তো অতীতের মতো অর্ডার আবার ভিয়েতনাম বা অন্য দেশে চলে যাবে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে