ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

তিন খাতে বিনিয়োগ মানেই অর্থ ফেরত অসম্ভব

২০২৫ জুলাই ২৮ ১০:০৫:২৫
তিন খাতে বিনিয়োগ মানেই অর্থ ফেরত অসম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদেশে থাকা পাচারকৃত অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসন করা হবে। অথচ এক বছরের মাথায় সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবতার মুখে মুখরিত—বিদ্যমান আইন দিয়ে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব নয়। ৪-৫ বছর লাগবে পুরো প্রক্রিয়ায়, আর জব্দ করতেই এক বছর!

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সের প্রধান ড. আহসান এইচ. মনসুর এখন বলছেন, বিদেশে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে ‘অ্যামিকেবল সেটেলমেন্ট’ করতে হবে—অর্থাৎ দোষীদের সঙ্গে আপস করে, তাদের কোনো শাস্তি না দিয়ে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে।

বিশ্লেষকদের দাবি, আগের সরকার (হাসিনা রেজিম) প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে আমদানি-রপ্তানি ও সরকারের অনুমোদিত প্রকল্পের আড়ালে। পাচার হওয়া অর্থের অনেকটাই গেছে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান আইল্যান্ডসের মতো দেশে। এসব দেশের আইন-কাঠামো এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশিদের বিপুল অর্থ।

বিদ্যমান আইনে অর্থ ফেরত আনা কঠিন বলেই বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। এর আগে নেওয়া নানা উদ্যোগ যেমন বিফল হয়েছে, এবারও তেমন আশঙ্কা বাড়ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কয়েকশ’ কোটি ডলার ফেরত আনার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই। এক টাকাও ফেরত আসেনি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দাবি ছিল, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিশেষ আইন করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইন অতীতের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না, কারণ অপরাধকালীন সময়ের আইনই বিচার প্রক্রিয়ায় কার্যকর হয়।

বাংলাদেশে পাচার সংক্রান্ত মামলায় মূল সাক্ষ্যদাতারা (বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ইপিবি, সিকিউরিটিজ কমিশন) থাকেন না। মানি লন্ডারিং মামলা হয় শুধু নৈতিক দায়ে। অপরাধীরা সাজা পায় না। তদুপরি বিদেশি সরকারগুলো তাদের স্বার্থে লেজিটিমেট ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে এই অর্থকে দেখে, ফলে তারা সহায়তা করে না।

'সেকেন্ড হোম' প্রকল্প বা 'গোল্ডেন ভিসা' স্কিমে বিনিয়োগ করে যারা পিআর বা নাগরিকত্ব নিয়েছে, তাদের অর্থ ফেরত আসবে কেন? এসব বিনিয়োগের আইনগত সুরক্ষা রয়েছে।

সিনিয়র আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই কথাগুলো নিছক রাজনৈতিক রেটরিক। টাকা ফেরত আনার প্রকৃত কোনো ব্যবস্থা নেই। পাচার ঠেকাতে হলে দেশের আইনি কাঠামো মজবুত করতে হবে, তদন্তে দক্ষতা আনতে হবে, প্রমাণ সংগ্রহে স্বচ্ছতা আনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যখন পিকে হালদারের মতো অপরাধীর বিদেশে শাস্তি হয়, তখন তাকে দেশে এনে সাজা ভোগ করানোর, সম্পদ ফেরত আনার মতো স্পষ্ট আইন থাকা দরকার ছিল। কিন্তু নেই। এমন আইন ভারত-পাকিস্তানে থাকলেও বাংলাদেশে নেই।”

অর্থ পাচার রোধে রাষ্ট্রের সদিচ্ছার ঘাটতি, আইনি অকার্যকারিতা ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা মিলিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার স্বপ্ন ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন—সরকার কি শুধু কথার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে, নাকি প্রকৃত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস দেখাবে?

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে