ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

পুলিশের আলোচিত চার কর্মকর্তা বরখাস্ত

২০২৫ জুলাই ১৩ ২১:৪৯:৪৭
পুলিশের আলোচিত চার কর্মকর্তা বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কাজে যোগ না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যেই এমন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। এবার ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করায় পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার চার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ছুটি ছাড়া কর্মস্থল থেকে উধাও ২১ পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো, যা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সরকারের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

রোববার (১৩ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে দেওয়া পৃথক চার প্রজ্ঞাপনে তাদের বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। ১২ জুলাই প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপসচিব নাসিমুল গনি। বরখাস্তকৃতদের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ছোট ভাই গোলাম রুহানীও রয়েছেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে: ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রওশানুল হক সৈকত (র‌্যাবে বদলির আদেশপ্রাপ্ত) গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ এর ২(খ) ও ২ (চ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় যেদিন থেকে অনুপস্থিত সেদিন থেকে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(গ) অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় যেদিন থেকে অনুপস্থিত সেদিন থেকে তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. গোলাম রুহানী গত বছরের ১১ আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ২(চ) অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় যেদিন থেকে অনুপস্থিত সেদিন থেকে তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ডিএমপির মিরপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(গ) অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় যেদিন থেকে অনুপস্থিত সেদিন থেকে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

এই চারজন ছাড়াও, পুলিশের প্রতাপশালী দুই ডজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি হারাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম (গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত) অন্যতম। ডিএমপির সাবেক তিন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এস এম মেহেদী হাসান ও রিফাত রহমান শামীমও ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় ২২ আগস্ট থেকে এবং সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ২৬ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার ৬ আগস্ট থেকে এবং অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জায়েদুল আলম ৪ নভেম্বর থেকে অনুপস্থিত আছেন। এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে, রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের এসপি আয়েশা সিদ্দিকা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জি এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নুর আলম মিনা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং গোয়েন্দা পুলিশের এসপি এটিইউ শাখার মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন ১ জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত আছেন। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হুসাইন ২৮ অক্টোবর থেকে, ঢাকা জেলার এসপি আসাদুজ্জামান ৯ সেপ্টেম্বর থেকে, অতিরিক্ত এসপি হাসান আরাফাত ১৯ নভেম্বর থেকে, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মলয় কুমার পোদ্দার ১৮ অক্টোবর থেকে এবং সিরাজগঞ্জের সাবেক এসপি আরিফুর রহমান ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলেছে, বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত এই পুলিশ কর্মকর্তারা মূলত আত্মগোপনে রয়েছেন এবং তাঁদের কয়েকজন ইতিমধ্যে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

এই বিধিমালা অনুযায়ী, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি একটি গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য একটি যুক্তিসংগত সুযোগ দেওয়া হয়। যদি কর্মচারীর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যবস্থায় তিরস্কার, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, পদাবনতি বা চাকরি থেকে অপসারণ করা হতে পারে। গুরুদণ্ড (যেমন অপসারণ) এবং লঘুদণ্ড (যেমন তিরস্কার) উভয়ই শাস্তিরূপে প্রযোজ্য হতে পারে।

বিধিমালা অনুযায়ী, গুরুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো কর্মচারী গুরুতর অপরাধ করেন বা দীর্ঘদিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হতে পারে। কোনো কর্মচারী যদি অফিসের নিয়মকানুন বা সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

সূত্র বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সময় থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশের এসব কর্মকর্তার সন্ধানে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে