ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
Sharenews24

যে কারণে ভিয়েতনাম সফর করে আসতে বললেন শফিকুল আলম

২০২৫ মে ১৬ ১২:২০:০৮
যে কারণে ভিয়েতনাম সফর করে আসতে বললেন শফিকুল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বামপন্থীদের অবস্থান ও ভাবনাপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভিয়েতনাম সফরের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, বামরা এখনো অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। তাদের উচিত ভিয়েতনাম সফর করে বিপ্লব, সংস্কার ও আধুনিক অর্থনৈতিক কাঠামোর বাস্তবতা উপলব্ধি করা।

আলোচনায় উঠে আসে রাখাইনে তথাকথিত মানবিক করিডর, নিউমোরিং টার্মিনাল, বিদেশীদের ইজারা এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা স্থাপন সংক্রান্ত ইস্যুতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ প্রসঙ্গ।

উপস্থাপক জানতে চান, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করেই কি সরকার এই ধরনের স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?

জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “বামরা যে এখনো অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে, সেটার একটা নমুনা। আবারো আমরা বলব যে, বামরা যেন ভিয়েতনাম সফর করে আসে। তারা দেখে যে ভিয়েতনামে এরকম ৪৪টা পোর্ট আছে। অনেকগুলোই পোর্ট প্রাইভেট কোম্পানি অপারেট করছে,বিদেশীরা অপারেট করছে।

তিনি বলেন,বামরা যেন মালয়েশিয়ায় ঘুরে আসে। মালয়েশিয়ায় অনেকগুলো পোর্ট বিদেশীরা অপারেট করছে। তো এই যে ইস্যুগুলো যে উঠছে এটা বুঝা যায় যে আপনি আপনার কোকুনের মধ্যে আছেন। আপনি বাইরে কি হচ্ছে আপনি পড়ছেনই না, জানছেনই না। এইযে ভিয়েতনামে একটা পোর্ট যারা অপারেট করছে তার একটা বড় হচ্ছে হল এপি মোলার মার্কস।”

তিনি বলেন, “এপি মোলার মার্কস ওয়ার্ল্ডের ওয়ান অফ দ লার্জেস্ট শিপিং কোম্পানি, ওয়ার্ল্ড অফ দ লার্জেস্ট টার্মিনাল অপারেটর। আমরা তাদের সাথে কথা বলছি। ড্যানিশ কোম্পানি ওয়ার্ল্ডের ৭০-৮০টা টার্মিনাল ওরা অপারেট করে। ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট কান্ট্রি। ভিয়েতনাম কিন্তু এখনো ফুললি কমিউনিস্ট কান্ট্রি। ওনারা জন্য উনারা তো লেফটিস্ট পার্টি করেন, ভিয়েতনামটা একটু ঘুরে আসেন। আমরা কেন নিউমরিং টার্মিনাল বলেন বা আমরা বে টার্মিনাল বলেন বা লালদিয়ার টার্মিনাল বলেন, এটা আমরা কেন দিচ্ছি? আমাদের বাংলাদেশের পুরো হচ্ছে ইকোনমিক হৃদস্পন্দন।”

শফিকুল আলম বলেন, “আপনি ইকোনমিকে বড় করবেন। আজকে যে যমুনা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ একটা ম্যাসিভ অ্যামাউন্ট অফ এক্সপোর্ট করতে গেলে বা পুরো বাংলাদেশে আমরা এখন এক্সপোর্ট করি ৫০ বিলিয়ন ডলারের মত। আমি যদি পাঁচ বছর এটাকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিতে চাই, এই পুরো এক্সপোর্টটা চিটাগং পোর্ট দিয়ে হবে। মংলা এটা পারে না। বেনাপোল পারে না।”

তিনি বলেন, “তো এটা করতে হলে যে লেভেল অফ এফিশিয়েন্সি লাগবে লজিস্টিকাল, সেটা আমার নাই বলতেই হবে। এই জায়গায় আমরা থুরি বুড়ি ছোটখাট কোন কোম্পানির সাথে কথা বলছি না। আমরা কথা বলছি ওয়ার্ল্ডের যারা লার্জেস্ট পোর্ট অপারেট করে আসে, তাদের সাথে । তারা এটা অপারেট করবে। তারা এই কাজগুলো অনেক জায়গায় করছেন। অনেকেই খুব এফিশিয়েন্টলি করছে।”

উপস্থাপক আবারো প্রশ্ন তোলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে কিনা।

জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল স্লোগানটা যেটা ছিল সেটা হলো সংস্কার। আর এটা হচ্ছে বাংলাদেশের খুবই ভাইটাল একটা সংস্কার। আপনি এই চিটাগং পোর্ট সংস্কার করবেন না? আপনার জব তৈরি হবে না। জব তৈরিটা আমাদের একটা বড় ম্যান্ডেট। সংস্কারটা আমাদের প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে লিখে দেওয়া হয়েছে।”

তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ছাড়া স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা-এ প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “মতৈক্যের তো বিষয় না। আমরা তাহলে পরেরদিন কয়দিন পরে বলব যে আপনাদের মত ছাড়া আপনি ট্যাক্স উঠাবেন না। আপনি আমাকে ম্যান্ডেট দিয়েছেন, আমি সেই ম্যান্ডেট, আমি একটা রেভলিউশনের থেকে ম্যান্ডেট পেয়েছি। সেই ম্যান্ডেটটা নিয়ে আমি এসছি। আমি একটা পুরো বিপ্লবের ম্যান্ডেট নিয়ে এসছি এখানে। এবং আমার প্রত্যেকটা কথায় কথায় আমার হচ্ছে যে আমার সংস্কারটা এমন সংস্কার, এটা একটা মোস্ট ইম্পর্টেন্ট সংস্কার। যার কারণে আমাদের জব তৈরি হবে। এই যে মানুষের অস্থিরতা, জব নাই তো! আপনি ১০-১৫ বছর ধরে আপনি উন্নয়নের গল্প করেছেন, কিন্তু জব ছিল না। ইয়াং ম্যান আর এং্রি, ইয়াং ওম্যান আর এং্রি।”

উপস্থাপক জানতে চান, পোর্টগুলো বিদেশীদের হাতে দিলে কিভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে?

জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা বলছি তো, পোর্টটা তো আমাদের থাকছে। অপারেটরটা বিদেশী। ঠিক তেমনি আপনি যে আদমজি বন্ধ হয়েছিল না? অনেক চিল্লাচিল্লি করেছিলেন আমাদের ইয়েরা। কি আদমজি বন্ধটা কি খারাপ হয়েছে? আদমজির যে জায়গা, আদমজি ওখানে ২৫ হাজার লোকের সংস্কার হতো। ওরা বসে বসে বেতন নিতেন। ওই জায়গাটা ওদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে, বুঝিয়ে দিয়ে ওই পুরো জায়গায় একটা ইপিজেড করা হয়েছে। ওইখানে এখন ২ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই যে আপনি যে পুরো পুরনো একটা মাইন্ডসেট নিয়ে আছেন, পৃথিবীতে কেউ এই ধরনের কথা শুনলে মানুষ হাসে।”

উপস্থাপক বলেন, ‘ওই বিষয়টা আমি এখনো কনভিন্স না। বন্দর, করিডর এইসব স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক মত ছাড়া, নির্বাচিত সরকার ছাড়া করা ঠিক কিনা?’

প্রেস সচিব উত্তরে বলেন, “উই গট ম্যান্ডেট টু ডু এভ্রিথিং!”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটা কিছুর ম্যান্ডেট আছে। আমাদের সংস্কার হচ্ছে মেন ম্যান্ডেট। এখন সংস্কারে সবকিছু পড়ে। কি পড়েন না আপনি আমারে বলেন?”উপস্থাপককে প্রশ্ন করেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, “রোহিঙ্গা ক্রাইসিস এত বছর ধরে পড়ে আছে, কিছু হচ্ছে না। তা আমরা এটা দেখবো না? আমাদের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ সবার সাথে কথা বলছেন। প্রফেসর ইউনূস ইউএনএ যেয়ে বলেছেন। বলার ফলে, উনার বলার কারণে একটা রেজুলেশন এডপ্ট হয়েছে এবং যার কারণে এ বছর সেপ্টেম্বরে একটা বড় সম্মেলন হচ্ছে। ১৭০ টা দেশে সেখানে পার্টিসিপেট করবে রোহিঙ্গা নিয়ে। এটা বলবেন না? এটাও তো সংস্কারের পার্ট। কারণ রোহিঙ্গা ক্রাইসিসটা পড়ে আছে। ইটস নোওয়ানস বেবি।”

উপস্থাপক প্রশ্ন তোলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যদি সব করে, তাহলে তো নির্বাচিত সরকারের আর দরকার নেই?”

জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “এটা তো ফালতু আলাপ। নির্বাচনও সংঘটিত করা আমাদের কাজ এবং নির্বাচন আগ পর্যন্ত যতগুলো ক্রাইসিস আছে, যতগুলো বিষয় আছে আমি প্রত্যেকটা করা আমার কাজ। আপনি ভাববেন না যে আমরা ওই যে তিন মাসের এই যে আমরা ক্লাসিক্যাল যেটা কেয়ারটেকার, আপনি সেই কেয়ারটেকার গভমেন্টের মুডে আছেন। ভাবছেন যে ওই যে কেয়ারটেকার গভমেন্ট যে তিন মাসে যে কাজগুলো করতো, আমরা কিছু করবো না, খালি ইলেকশন করব, নতুন ভোটার রিচ করব, ইলেকশন করে ছেড়ে দিবো! আমরা তো সেই জন্য আসি নাই!

এবং আমরা ইলেকশনটা করব এই সংস্কারের একদম শেষে। আমরা একটা পলিটিক্যাল গভমেন্টের কাছে হ্যান্ডওভার করে চলে আসবো এবং যেই ইলেকশনটা হবে ডিসেম্বর থেকে জুনের যেকোন একটা সময়।”

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে