ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
Sharenews24

প্রতারণার জালে আইএফআইসি ব্যাংক, অভিযুক্ত সালমান এফ রহমান

২০২৫ মে ১২ ১২:৪৩:২৯
প্রতারণার জালে আইএফআইসি ব্যাংক, অভিযুক্ত সালমান এফ রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩ সালের মার্চে বেক্সিমকো গ্রুপ দ্রুতগতিতে গঠন করে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি—শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল)। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল গাজীপুরে ‘মায়ানগর’ নামের এক বৃহৎ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন। এর কিছুদিন পরেই বাজারে আনা হয় ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে ১,০০০ কোটি টাকার বন্ড; যার গ্যারান্টার ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। মাত্র পাঁচ সপ্তাহেই ১২ শতাংশ মুনাফার আশ্বাসে এই বন্ড পুরো বিক্রি হয়ে যায়।

তবে পরবর্তী তদন্তে দেখা যায়, সংগৃহীত ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২০০ কোটি টাকা এফডিআর (মেয়াদি আমানত) হিসেবে রাখা হলেও বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, এসব অর্থ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকের মামলা ও রাজনৈতিক পালাবদল

এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত মাসে সাবেক শিল্প উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে শায়ান রহমান এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সালমানের গ্রেপ্তার ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরো প্রকল্প ও ব্যাংকটি বড় ধরনের চাপে পড়ে।

২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বেক্সিমকো প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল, যার মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চাপ প্রয়োগ করেও টাকা সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ঝুঁকিতে বিনিয়োগ

বিএসইসির অনুমোদনে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ বেচে ৭ হাজার ১৭৩ জন বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করা হয়। শর্ত অনুযায়ী, গাজীপুরে ৭৬ লাখ বর্গফুট জমিতে ৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠার কথা ছিল মায়ানগর প্রকল্প। কিন্তু নির্মাণকাজ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্থগিত হয়ে যায়। এসটিএলের কোম্পানি সচিব কায়সার আহমেদ জানান, বিক্ষোভের সময় প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় এবং ভবন নির্মাণ শুরুর আগেই কাজ থেমে যায়।

আইএফআইসি ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিল রয়েছে, যা ছয় মাস চলবে। এর আগে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

বন্ড ও সম্পত্তি মূল্যায়নে জালিয়াতির অভিযোগ

দুদকের এজাহারে বলা হয়, প্রকল্পের জন্য বন্ধক রাখা ৩,৭১৬ শতাংশ জমির প্রকৃত মূল্য ছিল ৮৭ কোটি টাকা। অথচ এটিকে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা মূল্যায়ন দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়। তদুপরি, শ্রীপুর টাউনশিপের পরিচালক ও এমডির নামে খোলা দুটি হিসাবের মাধ্যমে মাত্র ছয় দিনে ৩৩৫ কোটি টাকার ‘কৃত্রিম লেনদেন’ দেখানো হয়, যা ব্যাংকের AML নিয়ম লঙ্ঘন করে করা হয়।

আসামিদের তালিকা

মামলায় নাম রয়েছে—আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. শাহ আলম সারোয়ার, পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এ.আর.এম নাজমুস সাকিবসহ বেশ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রকের সাবেক কর্মকর্তার। এছাড়া, সালমান এফ রহমান পরিবারের ৯৪টি কোম্পানির কার্যক্রম ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়েছে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বন্ডের অর্থ উত্তোলনের পর তা সন্দেহজনকভাবে ‘লেয়ারিং’ পদ্ধতিতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে