ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় পরিশোধ

২০২৪ ডিসেম্বর ২৬ ১৯:৪৭:২৪
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় পরিশোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পূর্ববর্তী দায় পরিশোধ করছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার কাজও চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৪৪ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে গেছে। অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমানত বৃদ্ধি পেয়ে মাত্র ৭.২৮ শতাংশ হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করার ফলে মুদ্রাবাজার সংকুচিত হচ্ছে। ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে বর্তমানে ১১.৬৫ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা ব্যাংকগুলো ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করছে। এর ফলে ঋণের সুদহার ১৩ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। উচ্চ সুদের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না, ফলে বেসরকারি খাতে অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৮.৩০ শতাংশ। এই পরিস্থিতির কারণে কেবল সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বেসরকারি এনসিসি এবং মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষিতে সুদহার বা শুল্ক তেমন বড় ভূমিকা রাখছে না। অতীতে ৯ শতাংশ সুদহার থাকা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি, এবং বর্তমানে সুদহার বাড়ানোর পরও কোন লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তিনি আসন্ন সময়ের জন্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করেন এবং উৎপাদক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য সরবরাহের উপায় নিয়ে চিন্তা করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ স্থিতি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত জুনে ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার, যখন জুনের শেষের দিকে এটি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ জুনের ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা থেকে কমে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন করে টাকা না ছাপানোর ঘোষণা দিলেও সাময়িকভাবে তারা এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। বিভিন্ন জালিয়াতির কারণে সংকটে থাকা ছয়টি ব্যাংকে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে বাজারে এই টাকার প্রভাব যেন বড় না হয়, সে জন্য ফের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের সর্বশেষ নিলাম বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ২০২১ সালের শেষ থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। পূর্ববর্তী সরকারের শেষ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তবে গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা গোপনভাবে ছাপানো হয়। বর্তমানে তা আবার সীমার নিচে নামানো হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে