ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

রাশেদ মাকসুদ-আবু আহমেদকে বিনিয়োগকারীর খোলা চিঠি

২০২৪ ডিসেম্বর ১০ ১৬:৫৬:৫৫
রাশেদ মাকসুদ-আবু আহমেদকে বিনিয়োগকারীর খোলা চিঠি

আমাদের দেশের পুঁজিবাজার ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৪ বছর যাবত খারাপ অবস্থায় রয়েছে । এই ১৪ বছরে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে । গত ১৪ বছর পুঁজিবাজার খারাপ থাকার অন্যতম কারণ ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি । এই অনিয়ম এবং দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম ছিল আইপিও এবং প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ লুটপাট করা। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতায় বিভিন্ন কারসাজি চক্র বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছে এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে যেসকল প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল সেগুলো সবই ছিল আইওয়াস বা লোক দেখানো । বাজার ভালো করার জন্য মন থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া বাজারে কোন সুশাসন ছিল না বিধায় গত ১৪ বছর বাজার ভালো হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম এবার হয়তো বাজার ভালো হবে এবং আমরা আমাদের হারানো পুঁজির কিছু অংশ হলেও ফেরত পাবো। কিন্তু বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাসেদ মাকসুদ এবং আইসিবির নতুন প্রেসিডেন্ট আবু আহমেদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং অযাচিত মন্তব্যের কারণে বাজার ভালো না হয়ে আরো খারাপ হয়েছে ।

মাকসুদ সাহেবকে বলছি আপনি চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হয়েই শেয়ারবাজারকে সংস্কারের নামে খোঁচাতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত গেম্বলারদের প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা করেছেন। আমার প্রশ্ন এখন পর্যন্ত কয়টাকা আদায় করতে পেরেছেন? হুট হাট করে অনেকগুলো কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে পাঠিয়েছেন, দুর্বল কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে ছাটাই করার কথা বলেছেন, বাজারে নতুন আইপিও আনার কথা বলছেন । আপনার এই সব সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভয় এবং শঙ্কা বিরাজ করছে।

মনে রাখবেন গেম্বলাররা শুধু গেম্বলার না , তারা সবাই পুঁজিবাজারের বড় বিনিয়োগকারী, আপনার এই কর্মকাণ্ডের কারণে তারা সবাই বাজার থেকে দূরে আছেন। ফলে বাজারের টার্নওভারও কমে গেছে, আর টার্নওভার কম হওয়ার কারণে এবং বাজার ডাউন ট্রেণ্ডে থাকার কারণে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীও আসতে সাহস পাচ্ছে না।

গেম্বলারদের আপনি জরিমানা করেছেন সেটা ঠিক আছে, তবে এই খারাপ মার্কেটের ক্ষেত্রে এটা করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া আমাদের পুঁজিবাজারে এখন ডিমান্ডের তুলনায় সাপ্লাই অনেক বেশি হয়ে গেছে এই মুহূর্তে মৌলভিত্তি বা মাল্টিন্যাশনাল কোন কোম্পানিকেই আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আনলে বাজারের জন্য ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। মনে রাখবেন পুঁজিবাজারে দুই ধরনের নীতি অবলম্বন করতে হয়, যখন বাজার ফল্ট করে তলানিতে চলে আসে তখন বাজারকে টেনে ওপরে তোলার জন্য সব ধরনের নিয়মনীতি শিথিল করতে হয়, বাজারকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হয় ,বাজারের স্বার্থে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নমনীয় আচরণ করতে হয়। আবার বাজার যখন অতিমাত্রায় উত্থান হয় তখন বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য আস্তে আস্তে সুযোগ সুবিধাগুলো কমাতে হয়।

১৯৯৬ সালে যখন মার্কেট ফল্ট করেছিল তখন সেই মার্কেটকে ভালো করার জন্য অমনিবাসের মতো ভুতুড়ে একাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ক্যাপিটাল গেইনের উপর এনবিআররে আরোপিত ট্যাক্স সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, বিদেশী বিনিয়োগকারিদের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছিল, ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নিয়মনীতি সহজ করা হয়েছিল, কাগুজে শেয়ারগুলোকে ইলেক্ট্রনিক শেয়ার এ রুপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, মার্জিন লোনের অনুপাত বাড়ানো হয়েছিল, ফোর্সড সেল বন্ধ করা হয়েছিল। এই রকম আরো অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল । অথচ এই মরা মার্কেটে এনবিআর পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর ট্যাক্স আরোপ করেছে, যা এই মরা মার্কেটের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো। তাই আপনাকে বলছি সংস্কারের নামে মার্কেটকে খোচানো বন্ধ করুন ,মার্কেটকে স্বাধীনভাবে চলতে দিন, মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করুন।

আবু আহমদ সাহেবকে বলছি, আপনি বলেছেন ইনডেক্স ৩০০/৪০০ এর বেশি বাড়তে দেয়া ঠিক হবে না আপনার এই খোচা মারা কথার কারণে বিনিয়োগকারীরা আপনার প্রতি এবং বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মার্কেটে নতুন বিনিয়োগকারী আসছে না, অথচ অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসলে তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে।

বিগত আওয়ামী সরকারের সময় পনেরো বছরে দেশ থেকে প্রায় আটাশ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে (অর্থনৈতিক অবস্থা যাচাই কমিটির শ্বেতপত্র অনুযায়ী ) যে কারণে দেশের অর্থনীতি ক্রমাগত খারাপ হয়েছে। তাই অন্যান্য সেক্টরের মতো পুঁজিবাজারও তারল্য সংকটে ভুগছিল ফলে বাজার ভালো হতে পারেনি । আওয়ামী সরকারের পতনের পর এখন অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি কমে স্থিতিশীল রয়েছে, রিজার্ভ কমার পরিবর্তে বাড়তে শুরু করেছে, ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলেও, বাকি ব্যাংকগুলোর কাছে ১,৮০,০০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে এই অবস্থায় পুঁজিবাজারও ভালো হবে এটা আমাদের সবারই প্রত্যাশা। অথচ এই মার্কেটের ইনডেক্সকে আপনি ৫০০০/৫৫০০ এর মধ্যে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করেন। শ্রীলংকায় রাজা পাকশে সরকারের পতনের পরে সেদেশের অর্থনীতির সাথে সাথে পুঁজিবাজারও অনেক চাঙ্গা হয়েছে। ভারতের শেয়ার বাজারের ইনডেক্স ৮০,০০০ অতিক্রম করেছে, পাকিস্তানের শেয়ার বাজারের ইনডেক্স বর্তমানে ৯৯,০০০ পয়েন্টে। প্রতিটা বিটকয়েনের দাম এখন এক কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। তাহলে আমাদের শেয়ার বাজারের ইনডেক্সকে কেনো আপনি পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন ? ইনডেক্স ১৫/ ২০ হাজারে গেলে আপনার সমস্যা কি ? আপনি কি জানেন আমাদের মার্কেটের ইনডেক্স যদি ১০,০০০ হয় তাও ৫০% বিনিয়োগকারীর লস কভার হবে না।

আমি মনে করছি আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখন তলানিতে পড়ে আছে। বাজারের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, আমি শতভাগ আশাবাদী এখান থেকে বাজার সামনের দিকে আগাতেই থাকবে। শুধু প্রয়োজন মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সে কাজটা আপনাকে এবং মাকসুদ সাহেবকেই করতে হবে।

আমি বিনিয়োগকারী ভাই বোনদের বলছি, আপনারা অল্পতেই পেনিক হয়ে লসে শেয়ার সেল করবেন না । বর্তমানে মার্কেট পিই সবচেয়ে কম, এখন শেয়ার সেল করার সময় না বরং এখন শেয়ার বাই করার উত্তম সময়, তাই হাতে থাকা শেয়ারটি নতুন করে বাই করে এভারেজ করার সুযোগ থাকলে বাই করে এভারেজ করুন। আমি মনে করছি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল থেকে গতিশীল হওয়ার সাথে সাথে পুঁজিবাজারও ভালো হতে শুরু করবে। তখন বাজারে স্রোতের মতো বিনিয়োগকারী আসবে। বন্যার পানির মতো বাজারে টাকা প্রবেশ করবে এবং বাজারের গড় লেনদেন ২০০০/৩০০০ কোটি টাকা হবে এবং আগামী তিন বছরের মধ্যে ইনডেক্স ১০-১২ হাজারে পৌঁছে যাবে। ইনশা আল্লাহ।

লেখক: বিনিয়োগকারী আবদুল খালেক

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে