ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুলিশের ১৯ পদস্থ কর্মকর্তা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৬ ১২:১৬:২৩
গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুলিশের ১৯ পদস্থ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ ২৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ সাতজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি ১৯ কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। যারা দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন, তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের কনফিডেনশিয়াল শাখা থেকে সাবেক-বর্তমান এই ২৬ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ থেকে তিন ধাপে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে গ্রেপ্তারের কারণও ব্যাখ্যা করা হয়।

এই ২৬ জন ছাড়াও বিগত সময়ে প্রভাবশালী এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আরও কর্মকর্তার নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেপ্তারের জন্য ধাপে ধাপে অনুমতি নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। কাউকে কাউকে আগে আটক করে পরে গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র-গুলি লুট করা হয়। এসব ঘটনায় নিহত হন পুলিশের ৪৬ সদস্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার সময় কর্মবিরতিতে ছিল পুলিশ।

এরপর পুলিশের শীর্ষ পদসহ বিভিন্ন পদে রদবদল, বদলি করা হয়। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩ কর্মকর্তাকে। পুলিশের অনেক কর্মকর্তা এখনো কর্মস্থলে ফেরেননি। কেউ কেউ কর্মস্থলে যোগ দিয়েই ছুটিতে চলে গেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তর যে ২৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, একই রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপির সাবেক তিন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও মেহেদী হাসান; পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, ঢাকার সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহিদুর রহমান ও সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী (গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়ার আগেই ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে আটক), ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ওয়ারী জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শামীম, উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম ও ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার তানজিল আহমেদ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উত্তরার সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার (চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম। মনিরুলসহ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাফীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যেসব কর্মকর্তা পুলিশ সদস্যদের তখন গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং গুলি চালানো এলাকায় যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে অনুমতি নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম বলেন, ফৌজদারি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের অনুমতি রয়েছে। যাঁদের পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন মামলায় আসামি হিসেবে নাম থাকা বিগত সময়ের প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। খুঁজে না পাওয়ায় অনেককে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।

গ্রেপ্তারের অনুমতির তালিকায় নাম থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে আছেন। কিসের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে, তা বুঝতে পারছেন না। বড় ঘটনার সময় কোনো একটি এলাকায় কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকেন, সেখানে সব দায় শুধু একজনের ওপর চাপানো সমীচীন নয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সারা দেশে এ পর্যন্ত পুলিশের সাবেক তিন আইজিসহ ১৮৪ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির ৯৯ জন। তাঁদের মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হক, অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক দুই ওসি আবুল হাসান, মাজহারুল ইসলামসহ সাত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এদিকে, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এমন সদস্যের সংখ্যা ১৮৭ জন। অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কয়েকজন দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, খন্দকার নুরুন্নবী ও সঞ্জিত কুমার, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে