ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

ইতিহাসে শেখ মুজিবের অবস্থান নিয়ে যত বিতর্ক 

২০২৫ আগস্ট ১৫ ১৯:০৯:০২
ইতিহাসে শেখ মুজিবের অবস্থান নিয়ে যত বিতর্ক 

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে দেশে চলমান বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পর, ১৫ আগস্ট তাঁর হত্যাকাণ্ডের ৫০তম বার্ষিকীতে দেশে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন, বরং বিতর্ক ও আলোচনা চলছে তাঁর ঐতিহাসিক অবস্থান নিয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ‘এককেন্দ্রিক ইতিহাস’ তৈরির চেষ্টায় শেখ মুজিবকে দলের সীমানায় আটকে ফেলেছিল। দীর্ঘমেয়াদি তোষামোদনির্ভর প্রচার-প্রচারণা, শিক্ষা ও প্রশাসনে তাঁর একক বর্ণনায় বিরক্তি তৈরি করে নতুন প্রজন্মের মাঝে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন,"একমুখী ইতিহাস নির্মাণে অন্য নেতাদের ভূমিকাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসকে দলীয় রঙে রঙিন করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়।"

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতে,"শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মুজিবও আক্রান্ত হন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ।"

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা হারালে দেশে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি সহ বহু প্রতীকী স্থাপনায় হামলা হয়। এবছরও ১৫ আগস্টে সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি; বরং বিরোধী গোষ্ঠীর পাহারায় ছিল এলাকা।

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে শেখ মুজিবকে মহানায়ক হিসেবে পড়ানো হতো, এখন পাঠ্যবইয়ে এসেছে ভিন্ন, এমনকি বিপরীত ধারণা—যা তাদের বিভ্রান্ত করছে।

ছাত্র আহসান হাবিব ও আরমান বলেন,“আমরা আগে তাঁকে পর্বতের মতো নেতা বলে জেনেছি, এখন শিখছি অন্য কথা। আমরা বুঝতে পারছি না—কোনটা সত্য।”

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দীর্ঘ সময় শেখ মুজিবকে ‘মুজিববাদ’ নামে এক আদর্শিক প্রকল্পে রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। নানা মুজিব কর্নার, বই প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং শিক্ষায় একতরফা প্রচারে মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়ে। ২০২০ সালের জন্মশতবার্ষিকীতে যে বিশাল ব্যয়ের (সাড়ে বারশো কোটি টাকা) আয়োজন হয়েছিল, তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন,"আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। অন্য নেতাদের ভূমিকাকে উপেক্ষা করে তাঁকে নিয়ে একমুখী বয়ান তৈরি করা হয়েছে।"

যদিও ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন—ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভেঙে ফেলা এবং মুজিববিরোধী প্রবণতা দেখে মানুষের মধ্যে নতুন করে সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অতীত ব্যবহারের ফল এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোরই প্রমাণ।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে