ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

৫০ বছর পর নরওয়ে থেকে মায়ের কাছে বাংলাদেশে এলিজাবেথ

২০২৪ মার্চ ২৯ ১৫:৫৮:৩০
৫০ বছর পর নরওয়ে থেকে মায়ের কাছে বাংলাদেশে এলিজাবেথ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেড় মাস বয়সেই মায়ের কোল ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়ে মৌসুমির। তবে মায়ের কোল ছাড়ার পর মৌসুমি নামে বেড়ে ওঠা হয়নি তার। মাঝখানে মাকে ছাড়া অনেকটা সময় পার করলেও মায়ের কথা ভুলেনি গর্ভের সন্তান। জন্মের পর আর্থিক অভাব অনটন ও অসুস্থতার কারণে মৌসুমীকে মোহাম্মাদপুরের সমাজকল্যাণ পরিচালকের কাছে দত্তক দেন তার মা ফিরোজা। পরে মৌসুমিকে নিয়ে নরওয়েতে পাড়ি জমান সমাজকল্যাণ পরিচালক। নাম রাখেন এলিজা। মাঝখানে চলে যায় ৫০ বছর।

৫০ বছর আগে মায়ের কোল ছারতে বাধ্য হলেও মাকে কখনো ভুলেননি এলিজা। তার চিন্তা চেতনার সবটা জুড়ে ছিল মা। অবশেষে স্বামীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার ফিরলেন মায়ের কাছে। যদিও জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে পেতে এলিজাবেথের এ যাত্রা মোটেই সহজ ছিল না।

গত ২১ মার্চ তিনি নরওয়ে থেকে ঢাকা আসেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে সমাজসেবা অফিসে পুরোনো নথি থেকে তার বাবা-মার ঠিকানা খুঁজে বের করেন। এর পর তিনি ঢাকা থেকে মাদারীপুরের শিবচরে ভাতিজা সেলিম সরদারের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে মায়ের সঙ্গে দেখা হয় এলিজাবেথ ফিরোজা ও তার স্বামী হ্যানরি।

অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের সরদার বাড়িতে দেখা মেলে মা-মেয়ের। মা ফিরে পান বুকের মানিককে। আর এলিজাবেথ পান তার মাকে। যেন এক আনন্দের মিলনমেলা শুরু হয়। অতি আনন্দে দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য নতুন জামা, কসমেটিক্সসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসেন।

পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ আটা-ময়দা সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান। আর নরওয়ে থেকে মেয়ে এলিজাবেথ যেন তার মাকে দেখতে পারেন সেজন্য একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে দেবেন বলে জানান। কিন্তু কেউই কারও মুখের ভাষা বুঝতে পারছে না। কেবলই আবেগ-অনুভূতি দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এলাকাবাসী জানান, শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচরের গ্রামের বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ঢাকা বসবাসকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ননদের বাসায় মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখেন মৌসুমি। সেই সময় ফিরোজা বেগমের আর্থিক অভাব অনটন ও অসুস্থতার কারণে মৌসুমীকে মোহাম্মাদপুরের সমাজকল্যাণ পরিচালকের কাছে দত্তক দেন। তৎকালীন সমাজসেবিকা রওশন জাহান শিশুটিকে (মৌসুমীকে) গ্রহণ করেন।

এলিজাবেদ এর আগেও ২০১৩ সালে গর্ভধারিণী মায়ের টানে এসেছিলেন বাংলাদেশে। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে যান নরওয়ে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ফের ২১ মার্চ ঢাকা আসেন। মোহাম্মদপুরের সমাজসেবা অফিসে নথি খুঁজতে থাকেন। যেখানে তাকে দত্তক নিয়ে নরওয়ে পাঠানো হয়েছিল। এলিজাবেথের শিশুকালের পাসপোর্টের নাম ছবির সঙ্গে সমাজসেবা অফিসের নথি মিলে যায়। এর পরই শিবচরে ছুটে যান মায়ের কাছে। ৫০ বছর পর ফিরে পান মাকে।

এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম জানান, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে তার বাবা মারা যান। তখন আমার মাথার ওপর কোনো ছায়া ছিল না। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। কোনো কূলকিনারা পাইনি। কিন্তু কোলের মানিক রাস্তায় ফেলে আসিনি। রেখেছিলাম সরকারের কাছে। বেঁচে থাকলে একদিন দেখা পাব। এক সময় আমার কোলে আসবে এটা বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসই আজ ৫০ বছর পর সত্যি হয়েছে। আমি আমার হারানো রত্ন ফিড়ে পেয়েছি।

এলিজাবেথ ফিরোজা জানান, ছোটবেলা থেকে নরওয়ে বড় হয়েছি। নরয়েন বাবা মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারপর থেকেই আমি ফিরাজো নামটাকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। তবে ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর সেখানকার চিকিৎসক আমার ইতিহাস জানাতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চেষ্টা করি।

এলিজাবেথ আরো জানান, এ ব্যাপের আমার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সেখান আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে ও নাতিন হয়েছে। বিকালে আবার স্বামীসহ নরওয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ফিরে যান এলিজাবেথ ফিরোজা।

শেয়ারনিউজ, ২৯ মার্চ ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে