ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ভ্রমণকালে রোজার বিধান

২০২৪ মার্চ ১৪ ১০:৪৬:২৬
ভ্রমণকালে রোজার বিধান

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মহান আল্লাহ তায়ালার মনোনীত একটি ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম ‘ইসলাম’। এ ধর্মের বিধানাবলি স্বভাব প্রকৃতির অনুকূল হওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত সহজ এবং বাড়াবাড়িমুক্ত। এখানে বিধিবিধান আরোপের ক্ষেত্রে যেমন বান্দার সামর্থের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে, তেমনি বিধানগুলো পালনের ক্ষেত্রে তার যৌক্তিক উযরকেও বিবেচনা করা হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার ওপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং মধ্যপন্থার নিকটে থাকো। আশান্বিত থাকো। সকাল-সন্ধায় এবং রাতের কিছু অংশে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো।’ [বুখারি: ৩৯]

ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি রমজানের রোজা। প্রাপ্তবয়স্ক সব মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর এ রোজা ফরজ। বিশেষ কিছু উযরের কারণে রমজানে রোজা না রেখে অন্য সময়েও তা আদায়ের সুযোগ আছে। এই উযরগুলোর অন্যতম একটি হল সফর বা ভ্রমণ। মুসাফিরের জন্য ভ্রমণকালে রোজা না রাখার অনুমতি আছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মাঝে কেউ যদি অসুস্থ থাকে অথবা ভ্রমণে থাকে সে রমজানের পর অন্য কোনও সময়ে কাজা করে নেবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর সহজ করতে চান। তিনি চান না তোমাদের উপর কঠিন করতে। [সূরায়ে বাকারা : ১৮৫]

এখানে ভ্রমণ বলতে যেকোনও রকমের ভ্রমণকে বোঝানো হয়নি। শরীয়তের হুকুমগত এ অবকাশ ওই ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাতে চারটি শর্ত বিদ্যমান থাকবে।

১। ভ্রমণের নিয়ত করা।

২। গন্তব্যের দূরত্ব সর্বনিম্ন ৪৮ মাইল/৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি হওয়া।

৩। নিজের গ্রাম বা শহর আবাদি এলাকা অতিক্রম করা।

৪। সফরকালে কোথাও ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত না করা।

উপরোক্ত শর্তগুলো বিদ্যমান থাকার পর ভ্রমণ কষ্টের হোক বা আরামদায়ক, ভ্রমণের উদ্দেশ্য ভালো হোক বা মন্দ সর্বাবস্থায় রোজা না রাখার সুযোগ আছে। তবে কষ্টকর না হলে রোজা রেখে নেওয়াই উত্তম। কারণ রমজানের বাইরে রমজানের ফজিলত পাওয়া যাবে না। আবার এ মাসে যেহেতু সবাই রোজা রাখছে, এমতাবস্থায় মুসাফিরের জন্য রোজা না রেখে স্বাভাবিক পানাহার করাটাও একটি বিব্রতকর ব্যাপার। তাই রোজা রেখে নেওয়াই ভালো।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রোজা রেখে নেওয়াটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বোঝো!’ [সূরায়ে বাকারা: ১৮৪]

এক হাদিসে আছে, হযরত হামযা বিন আমর আসলামী রা. অধিক রোজা পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চেয়ে বললেন, আমি সফরেও কি রোজা পালন করতে পারি? রাসুল বললেন, তুমি চাইলে পালন করতে পারো, আবার চাইলে নাও করতে পারো। [বুখারি: ১৯৪৩]

তবে রোজা রাখাটা যদি নিজের কিংবা সফরসঙ্গীদের ক্ষতির কিংবা অতিরিক্ত কষ্টের কারণ হয় তাহলে সফরে রোজা না রাখাই উত্তম।

বর্ণিত আছে, মক্কা বিজয়ের বছর রোজা পালনরত অবস্থায় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশে রওনা করলেন। তাঁর অনুসরণে সাহাবায়ে কেরামও রোজা পালন করছিলেন। যখন কুরাউল গামীম নামক স্থানে পৌঁছলেন, তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর জনসম্মুখে পানি পান করে রোজা ভেঙে ফেললেন। তাঁকে বলা হলো, কিছু মানুষ এরপরও রোজা রেখেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা অবাধ্যচারী তারা অবাধ্যচারী। [মুসলিম: ২৫০০]

অপর এক হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চই আল্লাহ তাআলা তাঁর অবকাশ দেওয়া কাজগুলো কার্যকর হতে তেমন পছন্দ করেন যেমন তিনি তাঁর অবাধ্যতাকে অপছন্দ করেন। অপর বর্ণনায় আছে, যেমন তিনি তাঁর অবকাশহীন কাজগুলো কার্যকর হতে পছন্দ করেন।’ [মুসনাদে আহমাদ : ২/১০৮]

আরেক হাদিসে আছে, ‘একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, এক ব্যক্তিকে ছায়া দেওয়া হচ্ছে এবং তার চারপাশে লোকের ভীড়। এ অবস্থা দেখে রাসুল বললেন, সফরে সওম পালন সওয়াবের কাজ নয়।’ [আবু দাউদ : ২৪০৭]

ভ্রমণকালে রোজার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

১। শরয়ী সফরের কারণে রোজা না রাখার সুযোগ আছে। (পূর্বে উল্লিখিত শর্তগুলো পরিপূর্ণরূপে পাওয়া গেলে তাকে শরয়ী সফর বলবে।) রোজা রাখা শুরু করে ভেঙে ফেলা জায়েয নেই। [রদ্দুল মুহতার : ৩/৪১৬]

২। দিনের শুরুর অংশে মুকীম থাকার পর সফর শুরু করলে ঐদিন রোজা রাখা আবশ্যক। এমনিভাবে মুসাফির ব্যক্তি যদি রাতে রোজা রাখার নিয়ত করে এবং ওই নিয়ত পরিবর্তন না করা অবস্থায় ভোর করে, সে রোজাদার বলে গণ্য হবে। ওই রোজা তার জন্য ভাঙা জায়েয হবে না। [রদ্দুল মুহতার : ৩/৪১৬]

৩। রমজান মাসে সফরত অবস্থায় রোজা ভাঙার শুধু নিয়ত করলো, কিন্তু ভাঙেনি অথবা ভাঙার নিয়তও করেনি এমতাবস্থায় অর্ধ দিবসের পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে নিয়ত করে ওই রোজা পূর্ণ করা ওয়াজিব। [রদ্দুল মুহতার : ৩/৪১৬]

এসব সুরতে রোজা ভেঙে ফেললে পরবর্তীতে শুধু কাজা করতে হবে। কাফফারা দিতে হবে না।

৪। মুসাফির ব্যক্তি রোজা না রাখা অবস্থায় দিনেরবেলা যদি মুকীম হয়ে যায়, অর্থাৎ নিজের স্থায়ী আবাসস্থলে ফিরে আসে বা কোথাও ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে তাহলে বাকি সময় রোজাদারের সাদৃশ্যাবলম্বন করবে। রোজা ভঙ্গকারী সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। [রদ্দুল মুহতার : ৩/৪১৬]

৫। সফরের কারণে রোজা না রাখলে পানাহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই গোপনীয়তা অবলম্বন করবে। যেন রমজানের হুরমত লঙ্ঘনের সন্দেহ তৈরি না হয়। [রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৮৪]

৬। সফরের কারণে যে সব রোজা ছুটে যাবে, মুকীম হওয়ার পর রমজানের বাইরে অবশ্যই সেগুলো কাজা করে নিতে হবে। [সূরায়ে বাকারা : ১৮৫]

শেয়ারনিউজ, ১৪ মার্চ ২০২৪

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে