ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

স্বর্ণ চোরাচালানে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা

২০২৪ জানুয়ারি ৩০ ০৮:০২:৫৬
স্বর্ণ চোরাচালানে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বর্ণ চোরাচালানে এবার বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জড়িয়েছেন স্বর্ণ চোরাচালান চক্রে। তিনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। নাম ডা. এম জেড এ শরীফ।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অধীনে ২০১২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৭তম বিসিএস এই কর্মকর্তার স্ত্রীও একজন ডাক্তার। পতেঙ্গা থানার বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা শরীফ প্রায় একযুগ ধরে

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ৪৬৪ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার বারসহ তাকে আটক করেছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি। এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে আসা এক যাত্রীকেও আটক করা হয়েছে।

এদিকে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর মামলা না দিয়ে মুচলেকা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে শরীফকে হস্তান্তর করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এ ছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে চোরাচালান মামলা করবে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ৫০০ গ্রামের কম হলে ফৌজদারি মামলা করা হয় না; একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি নিতে বলা হয়েছে।

তবে অতীতে একটি বা দুটি স্বর্ণবার নিয়ে আটক হওয়া যাত্রীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও থানায় হস্তান্তরের নজির রয়েছে।

মূলত বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের তদবিরের মুখে শরীফকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে,, সোমবার সকালে শারজাহ থেকে আসা এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম আসেন মো. আলাউদ্দিন। ফ্লাইটটি অবতরণ করলে সেখানে ছুটে যান চিকিৎসা কর্মকর্তা শরীফ। তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নজরদারি বাড়ান শুল্ক কর্মকর্তারা।

যাত্রীরা নামার সময় সেখানে তিনি বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেন। এরপর বিমানবন্দরের আগমনী ইমিগ্রেশন স্টেশনের কাছে নিজের চেম্বারে আসেন। সেখান থেকে বের হয়ে ইমিগ্রেশন স্টেশনের পাশে রাখা পানির জার থেকে তাকে পানি পান করতে দেখেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

তখন তাদের সন্দেহ আরও জোরদার হয়; কারণ ডাক্তারের চেম্বারের ভেতরেই সুপেয় পানির বোতল রয়েছে। ফলে সিসি টিভি ক্যামেরায় নজরদারিতে রাখেন। এরই মধ্যে তার কাছে একজন যাত্রী এসে দ্রুত চলে যান। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হলেও তার সঙ্গে আইডি কার্ড ছিল না।

বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় কাস্টমস কর্মকর্তারা পরিচয় জানতে চাইলে চিকিৎসক পরিচয় দেন তিনি। কাস্টমস কর্মকর্তারা তাকে সাধারণ গেইট দিয়ে বের না হয়ে স্ক্যানিং মেশিনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

স্ক্যানিং মেশিনে প্রবেশ করলে তার সঙ্গে মেটাল বস্তু রয়েছে এমন সংকেত মিলে। এরপর তার শরীর তল্লাশি চালিয়ে টাকার ব্যাগের মধ্যে চারটি সোনার বার পাওয়া যায়। পরে তাকে আটক করে কাস্টমস শাখায় নেওয়া হয়।

সেখানে শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোনা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে পুরো বিমানবন্দরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

মামলা ও গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সাধারণত ৫০০ গ্রামের কম হলে ফৌজদারি মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয় না। কারণ অনেক সময় আইন না জেনেও কেউ কেউ নিয়ে আসেন।

এ ছাড়া তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা; তাই বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাস্টমসে তার বিরুদ্ধে চোরাচালান মামলা দায়ের করা হবে।

এদিকে ঘটনার পরপর বিমানবন্দর থেকে ডা. শরীফকে প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে দুই সদস্যের কমিটি।

কমিটির সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমন বড়–য়া ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ওয়াজেদ চৌধুরী অভি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ডা. ইফতেখার আহমদ জানান, ২০১২ সাল থেকে শরীফ শাহ আমানতে কর্মরত। এ ঘটনায় তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি নেওয়া হবে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা আল আমীন বলেন, বিমানবন্দরে দায়িত্বরত অনেকেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার খবর ছিল আমাদের কাছে।

ভিআইপি গেইটে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সন্দেহভাজনদের বিশেষ নজর রাখা হয়। এরই অংশ হিসেবে ডা. শরীফকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে চিকিৎসক আটকের ঘটনায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নিজ শাখার বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিমানবন্দর পরিচালক।

প্রত্যেক শাখা প্রধানরা বিষয়টি কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনকে কোনো ধরনের প্রটোকল না দেওয়া এবং কাস্টমস হলে প্রবেশ না করতে বলা হয়েছে।

শেয়ারনিউজ, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে