ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানিতে ভাটা

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০২ ০৭:১৫:৫৪
৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানিতে ভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি পণ্যের রপ্তানি কমেছে। যা সরকারের রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টার জন্য একটি অশনি সংকেত।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় আগের বছরের তুলনায় ৭.৪২ শতাংশ কমে ৫৪৮.১০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

এটি ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আইটি অ্যানাবলড সার্ভিসেস (আইটিইএস) ও সফটওয়ার এবং কম্পিউটার কনসালটেন্সিসহ সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একইভাবে সফটওয়ার থেকে রপ্তানি আয় ১৯.৬৬ শতাংশ কমে হয়েছে ৪৭.৮৫ মিলিয়ন ডলার।

কম্পিউটার কনসালটেন্সি সেবার রপ্তানি ৮.৯৩ শতাংশ কমে ৩৪.৭৬ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এছাড়া, কম্পিউটার ও পেরিফেরাল সরঞ্জাম পরিষেবার ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত ৩০.৭২ শতাংশ কমে হয়েছে ৬.৮৮ মিলিয়ন ডলার।

আইটিইএসের মধ্যে পড়ে গ্রাফিক ডিজাইন, ইমেজ এডিটিং ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের মতো কাজ, এখানের রপ্তানি আয় ৫.৩২ শতাংশ কমে ৪৫৮.৬২ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বেসিসের পরিচালক রাশাদ কবির এই বিষয়ে বলেন, 'গত এক দুই বছরে সফটওয়ার রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ছিল, কিন্তু গত কয়েক মাসের তথ্যে দেখা গেছে রপ্তানি কমছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, যারা কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ কোম্পানি খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছে। ফলে, আমাদের সফটওয়ার রপ্তানি কমেছে।'

করোনার সময় রিমোট ডেভেলপারদের নিয়োগ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের অনেক সফটওয়ার কোম্পানি এবং ডেভেলপাররা অফশোর ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসেবে কাজ করেছিল।

তিনি বলেন, 'কিন্তু গত ছয় মাসে এসব কোম্পানি আবার অনসাইট কাজে ফিরে গেছে, যা বাংলাদেশের সফটওয়ার রপ্তানি কমার আরেকটি কারণ হতে পারে।'

তিনি বাংলাদেশের আইটি কোম্পানিগুলোকে আফ্রিকা ও প্যান প্যাসিফিক এশিয়ার মতো কিছু বাজারের দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন, যেখানে আইটি পণ্য সরবরাহ করে আয়ের অনেক সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, 'কোম্পানিগুলোকে শুধু সেবা দেওয়ার পরিবর্তে পণ্য উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে।'

বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, আইটি পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে।' তিনি বলেন, 'এর মধ্যে খুব সাধারণ কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এ কারণে বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলো আইটি ইনস্টলেশন আপডেট করছে না। আইটিতে তাদের বিনিয়োগ কমায় আমাদের রপ্তানির পরিমাণ কমেছে,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করে, যেমন সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন ও ফটো এডিটিং। এ ধরনের কাজগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক প্রসেস অটোমেশনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। বলতে গেলে কার্যকরভাবে মানুষকে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া, চ্যাটবটগুলো অনেক বিপিও পরিষেবা প্রতিস্থাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের মেধাবীদের ও কোম্পানিগুলোকে ডেটা বিশ্লেষণ এবং ডিসিশন মেকিংয়ে মতো কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের কাজে প্রতি ঘণ্টায় গড় পেমেন্ট ১০-১৫ ডলার থেকে বেড়ে ৫০-৬০ ডলার হবে। এছাড়া ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তিতে আমাদের দক্ষতা খুবই কম। এ ধরনের প্রযুক্তির জন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে। না হলে আমাদের আইটি রপ্তানি কমতে থাকবে।'

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, 'সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইটি ফ্রিল্যান্সার তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কিন্তু, সফটওয়ার ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে লোকবলের দক্ষতা বাড়ানোর খুব একটা প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।'

তিনি মন্তব্য করেন, দেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বাড়িয়ে সামগ্রিক আইটি রপ্তানি আয় বাড়ানো কঠিন, কারণ তাদের ব্যক্তিগত আয় ন্যূনতম পর্যায়ের। তিনি আরও বলেন, ভারতের আইটি রপ্তানি বর্তমানে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কারণ তারা ইনফোসিস, উইপ্রো ও টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছে।

তিনি বলেন, 'এসব প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় ও উচ্চমানের সফটওয়ার তৈরি করে। এজন্য সেখানে হাজার হাজার কর্মীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি। তিনি জানান, এছাড়া বিশ্বের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে, সেসব কর্মী এখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এটিও বাংলাদেশের সামগ্রিক আইটি রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে।

ফাহিম মাশরুর আরও বলেন, 'আরেকটি কারণ হলো, আমাদের আইটি ফার্মগুলোর ক্লায়েন্টরা ছোট স্টার্টআপ। তাই বিশ্বজুড়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।'

শেয়ারনিউজ, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে