ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ঢাকার বাতাস হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী, বাঁচতে হলে যা করণীয়

২০২৫ ডিসেম্বর ২৩ ১০:৫৮:০৭
ঢাকার বাতাস হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী, বাঁচতে হলে যা করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতের শুষ্ক বাতাস আর ধুলাবালির দাপটে ঢাকার আকাশ যেন ক্রমেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে উঠছে। বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোয় আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাতাসকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৭টি দেশের দূষিত শহরের তালিকায় আজ ঢাকা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তালিকার শীর্ষে আছে মিশরের রাজধানী কায়রো।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের তথ্য বলছে, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৫৪, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাতাসের মান ‘সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ পল্লবীর একিউআই স্কোর ৩০২, বেজ এজওয়াটার আউটডোর ২৭৯, ইস্টার্ন হাউজিং ২৬৭, কল্যাণপুর ২৬৬ এবং গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এলাকায় ২৩৯ রেকর্ড করা হয়েছে।

আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ অতিক্ষুদ্র ক্ষতিকর বস্তুকণা। এসব কণার আধিক্য শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের মতো জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক উপাদান হলো পিএম ২.৫। এটি এতটাই সূক্ষ্ম যে সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং রক্তপ্রবাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

এদিকে দূষিত শহরের তালিকায় কায়রো শীর্ষে রয়েছে, যেখানে একিউআই স্কোর ৩৪৬—যা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচিত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি (২৬৪), চতুর্থ স্থানে পাকিস্তানের করাচি (২০৬) এবং পঞ্চম স্থানে ইরানের তেহরান (১৭১)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই ৫০-এর নিচে থাকলে বাতাসকে ভালো ধরা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ হলে তা সংবেদনশীল মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০ ছাড়ালে তা দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী এক নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ঘরের ভেতর ও বাইরের বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এই সংখ্যা বছরে প্রায় ১০ লাখ বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অতিমাত্রার দূষণের কারণে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ইটভাটা ও শিল্পকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণস্থলে বেষ্টনী ও ছাউনি ব্যবহার, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নিয়মিত পানি ছিটানো এবং ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর



রে