ঢাকা, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

প্রবাসীদের টাকা দিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়ে ব্যাংকগুলো বিপাকে

২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ১৫:৩৩:১০
প্রবাসীদের টাকা দিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়ে ব্যাংকগুলো বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রেমিট্যান্সের ওপর সরকারি নগদ প্রণোদনার অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা ব্যাংক খাতের মুনাফা ও তারল্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। বর্তমানে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালে সরকারের পক্ষে ব্যাংকগুলো ২.৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা গ্রাহকদের অগ্রিম প্রদান করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সেই অর্থ ফেরত পায়।

তবে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে এই অর্থ পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় বকেয়ার পাহাড় জমছে এবং ব্যাংকগুলো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৩,৫০০ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী থাকায় আরও ৫০০ কোটি টাকা যুক্ত হয়ে মোট বকেয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১৭ দিনেই প্রবাসীরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যার ফলে ব্যাংকগুলোর ওপর এই ভর্তুকির বোঝা আরও বেড়েছে। বকেয়া পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যাংকগুলো এখন আমানতকারীদের তহবিল ব্যবহার করে এই প্রণোদনা দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের বকেয়া ছিল ১৮৫ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৪৪৫ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা এবং পুবালী ব্যাংকের বকেয়া ছিল ১৬০ কোটি টাকা। আগে যেখানে এক মাসের মধ্যে এই অর্থ সমন্বয় করা হতো, এখন সেখানে ৫ মাসেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, ব্যাংকগুলো কার্যত কোনো নীতিমালা ছাড়াই সরকারের ভর্তুকির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকগুলোর জন্য জটিলতা তৈরি করবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং পুবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, অর্থ আটকে থাকায় তহবিল ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দিলেও এখনো তা ব্যাংকগুলোর হাতে পৌঁছায়নি। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই বকেয়ার কারণে তারা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন। কারণ যে অর্থ প্রণোদনা হিসেবে আটকে আছে, তা বর্তমানে ১০.৭২ শতাংশ সুদে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের মুনাফা করতে পারত। এই সুযোগ হারানোর ফলে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আয়ে বড় ধাক্কা লাগছে। একটি হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে বছরে ১০.৭২ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব ছিল, যা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন যে, সরকারি অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কোনো সংশয় নেই এবং বিলম্ব হলেও ব্যাংকগুলো তাদের পাওনা বুঝে পাবে। অন্যদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রণোদনার অর্থ প্রতি মাসে না দিয়ে নির্দিষ্ট বিরতিতে দেওয়া হয় এবং ঈদ বা বিশেষ সময়ে ব্যাংকগুলোর অনুরোধে অনেক সময় অগ্রিমও দেওয়া হয়। ফলে দুই-তিন মাসের বিলম্বকে তারা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন।

তবে ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডলার বাজার স্থিতিশীল হওয়ার পর বর্তমানে এই প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন, কারণ এটি ব্যাংকগুলোর তারল্য ও ব্যালেন্স শিট ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করছে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে