ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

জ্বালানি তেল চুরির আঁড়ালে ‘ব্রাজিল বাড়ির মালিক’ জয়নাল

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১২:২৩:০৭
জ্বালানি তেল চুরির আঁড়ালে ‘ব্রাজিল বাড়ির মালিক’ জয়নাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত ছয়তলা ‘ব্রাজিল বাড়ি’ সবাইকে বিস্মিত করেছে। পুরো বাড়ি আঁকা ব্রাজিলের পতাকায় এবং ফলকে লেখা ‘ব্রাজিল বাড়ি’ নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় ঢাকায় ব্রাজিলের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা ডি অলিভেরিয়া জুনিয়র এই বাড়িতে গিয়েছিলেন।

ব্রাজিল বাড়ির মালিক যমুনা তেল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন (টুটুল)। তার বিরুদ্ধে সরকারি জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জয়নাল দশকেরও বেশি সময় ধরে যমুনা অয়েল কোম্পানির লেবার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি। যদিও ইউনিয়নের মূল কার্যালয় চট্টগ্রামে, তবে তিনি ফতুল্লার ডিপোতে নিজের নামে একটি কার্যালয় গড়ে তুলেছেন। তিনি বিগত সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পরও ডিপো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

গত মার্চে যমুনা তেল কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জয়নালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের জুলাই আন্দোলনের খুনের মামলায় পলাতক থাকা সত্ত্বেও অফিসে হাজিরা দেখানো হচ্ছে, কিন্তু কোম্পানি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর জয়নালের ‘ব্রাজিল বাড়ি’তে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়, যা এখনও মেরামত হয়নি এবং ফাঁকা পড়ে আছে।

সরকারি তিন তেল কোম্পানি — পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার সূত্রে জানা গেছে, তেল চুরির একটি জটিল চক্র গড়ে উঠেছে, যার মূলে রয়েছে শ্রমিক সংগঠনের (সিবিএ) কিছু নেতাদের। জয়নালসহ এই চক্রের লোকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত।

যমুনা তেলের তেল চুরির কৌশল

উচ্চ তাপমাত্রার কারণে তেলের পরিমাণ স্বাভাবিকের বেশি দেখানো হয়, যা বিক্রয়ের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়।

তেলের একাংশ বিক্রি করে ভেজাল মিশিয়ে ঘাটতি পূরণ করা হয়।

বিলাসবহুল জীবন ও অবৈধ সম্পদ

জয়নালের বেতন আনুমানিক ২০ হাজার টাকা হলেও সুযোগ-সুবিধাসহ বেতন ৫০ হাজারের ওপর। তার এবং পরিবারের নামে কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ‘ব্রাজিল বাড়ি’ নামে পরিচিত ছয়তলা ভবনটি তার।

জয়নাল দাবি করেন, ঢাকায় তার কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়ি নেই এবং এই বাড়ি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় ও ব্যবসা আয়ের টাকা থেকে তৈরি। তবে যমুনা তেল কোম্পানির কর্মকর্তারা এ দাবি অস্বীকার করেছেন।

তার পরিবারের অনেক সদস্য যমুনা তেল কোম্পানির ডিপোতে কর্মরত। এছাড়াও তার নামে ঋণ নেওয়া হলেও তা শিগগির শোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

যমুনার অন্য সিবিএ নেতা মোহাম্মদ এয়াকুবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন।

দুদকও তেল চুরি ও দুর্নীতির বিষয়গুলো তদন্ত করছে।

মেঘনা তেল কোম্পানির সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে।

তেল চুরি ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগের পর তেল কোম্পানি ও বিপিসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

জয়নালের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। গ্রামবাসীরা জানায়, শুরুতে তাদের পরিবারের কোনো বড় সম্পদ ছিল না, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জমিজমা ও দানের কাজ বাড়ানো হয়েছে। বাড়িতে এসি রুম, গ্যারেজ, পুকুর খনন ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে