ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে কারসাজি: এনআরবিসি ব্যাংক ও সহযোগীদের তদন্ত শুরু

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ০৭:৫৩:৩৪
শেয়ারবাজারে কারসাজি: এনআরবিসি ব্যাংক ও সহযোগীদের তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি-র চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল এবং এসকেএফ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির সহযোগী দুটি প্রতিষ্ঠান— এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর মাধ্যমেই শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঠিক কীভাবে এবং কত কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখার জন্য বিএসইসি-র মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এই কমিটি আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এছাড়া, তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসি-র এই কঠোর পদক্ষেপের মূল ভিত্তি হলো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিএসইসি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের মতে, শেয়ারবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯, বিএসইসি আইন ১৯৯৩ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিগত সরকারের সময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা খুব কমই নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসি-র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে নতুন কমিশন এখন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনআরবিসি ব্যাংক-এর বিরুদ্ধে এই উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত শুরু হলো।

জানা গেছে, এই তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই পারভেজ তমাল নানা আইনি জটিলতার মুখে পড়েছেন। দুদকের মামলায় তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক ছিল অন্যতম। এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং প্রবাসে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ব্যক্তিরা ছিলেন। চলতি বছরের ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংক-এর পর্ষদ ভেঙে দেয়। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এসএম পারভেজ তমাল।

বিএসইসি আশা করছে, এই তদন্তের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাবে। কমিশন মনে করে, শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই তদন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে