ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনকে হটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

২০২৫ অক্টোবর ০২ ১১:০৭:৪২
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনকে হটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল পোশাক বাজারে দীর্ঘদিনের চীনা প্রভাব ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, আর এই তৈরি হওয়া শূন্যস্থানটি দ্রুত পূরণ করছে বাংলাদেশ। রপ্তানি থেকে আয়, পণ্যের পরিমাণ এবং প্রতিটি ইউনিটের গড় মূল্য—এই তিনটি প্রধান সূচকেই বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী অগ্রগতি দেখাচ্ছে। যদিও মোট অর্থমূল্যে চীনের রপ্তানি এখনও বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কাঠামো বাংলাদেশকে একটি বড় ধরনের সুবিধা এনে দিয়েছে। যেখানে চীনা তৈরি পোশাকের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রায় ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই শুল্ক হার মাত্র ২০ শতাংশ। এর সঙ্গে মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধাও পাচ্ছে বাংলাদেশ।

রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা আত্মবিশ্বাসী যে, এই শুল্ক সুবিধার কারণে আগামী বছরগুলোতে চীন যে বাজার হারাবে, তার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ দখল করে নেবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ, যা আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ সরবরাহ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি আয় প্রায় ৪৬ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে, বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

• ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৫৪ কোটি ডলার, যা গত বছর এক হাজার ৬৫১ কোটি ডলারে নেমে আসে।

• অন্যদিকে, একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫৪০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৭৩৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুরু হওয়া শুল্কযুদ্ধের ফলেই চীনের রপ্তানি কমছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও কমবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশকে এখন শুধুমাত্র উৎপাদনের পরিমাণ (ভলিউম) না বাড়িয়ে মূল্য সংযোজিত পণ্য (Value-added products) তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, একই পরিমাণ রপ্তানিতে ভিয়েতনামের মতো দেশ বেশি মূল্য পেলেও, বাংলাদেশ তুলনামূলক কম আয় করছে।

রপ্তানির পরিমাণগত দিকেও বাংলাদেশের উন্নতি স্পষ্ট। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাকের ভলিউম ১৮ শতাংশের বেশি কমেছে (২০১৫ সালে ১ হাজার ১৩৮ মিটার থেকে ২০২৪ সালে ৯২৯ মিটারে নেমে এসেছে)। একই সময়ে, বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১৮৭ মিটার থেকে বেড়ে ২৩৭ মিটারে দাঁড়িয়েছে—যা প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ বৃদ্ধি।

আকর্ষণীয় বিষয় হলো, ইউনিটপ্রতি গড় মূল্যের (Average Unit Price) ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ইতিবাচক অগ্রগতি দেখিয়েছে। ২০১৫ সালে চীনা পোশাকের গড় মূল্য ছিল ২ ডলার ৬৮ সেন্ট, যা এখন প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে ১ ডলার ৭৮ সেন্টে নেমে এসেছে। এর বিপরীতে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গড় ইউনিট মূল্য একই সময়ে ২ ডলার ৮৯ সেন্ট থেকে বেড়ে ৩ ডলার ১০ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ এখন শুধু রপ্তানির পরিমাণে নয়, বরং পণ্যের উচ্চ দর নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও সাফল্য দেখাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শক্ত অবস্থানকে আরও মজবুত করছে।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে