ঢাকা, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আরও বেপরোয়া কারসাজিকারী চক্র, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৬:০২:৩১
আরও বেপরোয়া কারসাজিকারী চক্র, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে জিকিউ বলপেনকে ঘিরে কারসাজির অভিযোগ নতুন নয়। তবে এ নিয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পরও কোম্পানির কারসাজিকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আজ বাজারজুড়ে পতনের দিনেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪.২৫ শতাংশ। দিনশেষে শেয়ারটি ৫৯৬ টাকা ৭০ পয়সায় ক্লোজ হয়েছে, যা বাজার সংশ্লিষ্টদের স্তম্ভিত করেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করছে—কারসাজিকারীরা বাজারের সার্বিক প্রবণতা তোয়াক্কা করছে না। বরং ইচ্ছে মতো দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে। তারা কার্যত জানিয়ে দিচ্ছে, বাজার ভেঙে পড়লেও তাদের স্বার্থসিদ্ধি অব্যাহত থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অস্তিত্ব তাদের কাছে অর্থহীন।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, জিকিউ বলপেনের পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে, যাদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু কর্মকর্তার আঁতাত রয়েছে। এ কারণেই শেয়ারের দর টানাটানি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাদের জন্য শেয়ারবাজার যেন ‘অরিক্ষিত মতিঝিল’।

আজকের লেনদেনে যখন বাজারের ২৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমেছে, তখন লোকসানি ও দুর্বল আর্থিক অবস্থার জিকিউ বলপেন উল্টো উর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ অস্বাভাবিক আচরণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের মতে, শেয়ারবাজারে যদি এ ধরনের অন্যায্য খেলা চলতেই থাকে, তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়বে আরও দ্রুত।

উদ্বেগের বিষয় হলো, জিকিউ বলপেন টানা তিন বছর ধরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণাত্মক মুনাফা দেখাচ্ছে। ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা, ২০২৩ সালে ছিল ১২ পয়সা এবং ২০২২ সালে লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ টাকা ৬৫ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২৪ সালে ৩ শতাংশ এবং তার আগের দুই বছরে ২.৫০ শতাংশ লোক দেখানো ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যার ফলে বছর জুড়ে শেয়ারটি কারসাজির কবলে থাকে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, জিকিউ বলপেনের শেয়ারে বিনিয়োগের পক্ষে কোনো যুক্তিই নেই। প্রতিষ্ঠানটির পিই রেশিও নেতিবাচক এবং আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। কিন্তু মাত্র ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকার কারণে কারসাজিকারীরা সহজেই এই শেয়ার নিয়ে ইচ্ছামতো খেলা করছে এবং এর দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে বিএসইসি ও ডিএসইর কিছু অসাধু কর্মকর্তার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২২ জুন জিকিউ বলপেনের শেয়ার দর ছিল ১৬০ টাকার নিচে। টানা দর বেড়ে আজ ক্লোজিং হয়েছে ৫৯৬ টাকা ৭০ পয়সায়। যেখানে একই খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ২০২৪ সালে ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে এবং চলতি ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১৪ টাকা ২৮ পয়সায় পৌঁছেছে—যা তাদের ধারাবাহিক আর্থিক উন্নতির প্রমাণ। তা সত্ত্বেও বিএসসির শেয়ার এখনো ১১৫ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। আজও শেয়ারটির দাম কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে।

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুধু জরিমানা বা লোক দেখানো ব্যবস্থা দিয়ে কারসাজি ঠেকানো সম্ভব নয়। বরং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে শেয়ারবাজার একদল কারসাজিকারীর নিয়ন্ত্রণে থেকেই যাবে।

এমএসএম/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে