ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ আগস্ট ২২ ২২:০১:৩৬
তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেড এবং আরামিট সিমেন্ট—এই তিন কোম্পানির কারখানা দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এবং হতাশা বাড়ছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

ডিএসই কর্তৃপক্ষ জানায়, ২১ আগস্ট আরএসআরএম, ২২ জুলাই আরামিট এবং ২১ জুলাই নূরানী ডাইংয়ের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে কারখানা তিনটি তারা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ফলে ডিভিডেন্ড বা শেয়ারের দামের ওপর নির্ভরশীল বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়েন। নূরানী ও আরামিটের শেয়ারহোল্ডাররা বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন না, বরং কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অব্যাহতভাবে কমছে।

নূরানী ডাইংয়ের বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তাদের কোম্পানি ২০১৮ সালের পর আর কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। সর্বশেষ ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ওই বছরই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাত্র দুই বছরের মধ্যেই আর্থিক সংকটে পড়ে কারখানা বন্ধ করে দেয় এবং পরে ঋণখেলাপি হয়। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কোনো তথ্যও প্রকাশ করছে না প্রতিষ্ঠানটি। গত ২১ আগস্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম নেমে আসে ২ টাকা ৮০ পয়সায়।

অন্যদিকে, একসময় ধারাবাহিকভাবে ভালো ডিভিডেন্ড দেওয়া আরএসআরএমও কয়েক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ২০২০ সালে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেই থেকে উৎপাদন কার্যক্রম থমকে যায়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। ফলে প্রতি বছরই লোকসান বাড়ছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৯ টাকা ৯০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগেও ২০ টাকার ওপরে ছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। যদিও কোম্পানি সচিব দাবি করছেন, কারখানা চালু আছে, তবে কার্যকর মূলধনের অভাবে উৎপাদন হচ্ছে না।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পর থেকে আরামিট সিমেন্টও লোকসানে পড়ে যায়। কোম্পানির চেয়ারম্যান রুখমিলা জামান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ২১ আগস্ট ডিএসইতে আরামিটের শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা।

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো যদি আবার কার্যক্রম শুরু না করে, তবে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ দুই-ই ধ্বংস হবে। তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করা হয়। তাদের দাবি, আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও নিয়মিত অডিট থাকলে এমন পরিস্থিতি আগেভাগেই বোঝা যেত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না, তাই বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ বড় ক্ষতির মুখে পড়েন।

তাদের মতে, কোনো কোম্পানি সাময়িকভাবে লোকসান করতে পারে, কিন্তু যখন পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা থাকে না, তখনই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়ে। সবচেয়ে হতাশাজনক হয় যখন প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের কোনো তথ্যই জানায় না—ফলে অজানার অন্ধকারেই তারা সীমাহীন ক্ষতির বোঝা বইতে বাধ্য হন।

তোহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে