ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ভিআইপি কারাগারে সাবেক মন্ত্রীদের বিলাসী জীবন

২০২৫ জুলাই ০৬ ১০:২৭:১৭
ভিআইপি কারাগারে সাবেক মন্ত্রীদের বিলাসী জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে গত ২১ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে একটি ‘বিশেষ কারাগার’, যেখানে রাখা হচ্ছে রাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের—অর্থাৎ ভিআইপি বন্দিদের।

কারা সূত্র জানায়, নতুন চালু হওয়া এই কারাগারে ধাপে ধাপে মোট ২৫০ জন ভিআইপি বন্দিকে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম দফায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৫০ জন ভিআইপি ও ৮০ জন দুর্ধর্ষ অপরাধীকে সেখানে নেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে যেসব ভিআইপি বন্দিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন:

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

সাধন চন্দ্র মজুমদার

হাসানুল হক ইনু

শাজাহান খান

কামরুল ইসলাম

সালমান এফ রহমান

এ বি এম তাজুল ইসলাম

ফরহাদ হোসেন

এছাড়া আরও আছেন—ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, দীপঙ্কর তালুকদার, আরিফ খান জয়, জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক এমপি শাজাহান ওমর, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, এবং সাবেক সচিব কামাল নাসের চৌধুরী।

এই বিশেষ কারাগারে রয়েছে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু মানবিক সুবিধা:

বড় পাঠাগার: যেখানে গল্প, উপন্যাস, আইন, ইসলামি বিষয় ও মনীষীদের জীবনীভিত্তিক বই রয়েছে।

নিয়মিত পত্রিকা পড়ার সুযোগ

প্লেগ্রাউন্ড ও হাঁটার ব্যবস্থা

ডিজিটাল সাক্ষাৎ ব্যবস্থা: সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সময় ও বুথ নির্ধারণ হয়।

২৪ ঘণ্টা নজরদারি: কারারক্ষীরা বডিক্যামেরা পরিধান করেন; সব কথোপকথন ও চলাফেরা রেকর্ড হয়।

অনেক সাবেক মন্ত্রী নিয়মিত বই পড়ছেন। আনিসুল হক ও কামরুল ইসলাম বেশি সময় দেন আইনের বইয়ে, অন্যদিকে ইনু ও শাজাহান খান মনীষীদের জীবনী পড়েন। কেউ কেউ গান গেয়ে সময় কাটান। কারা সূত্র বলছে, অনেকেই ধর্মীয় বইয়ের অনুরোধও করেছেন।

কারা সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ ভিআইপি বন্দি এখন তুলনামূলকভাবে কম আবদার করেন। তবে একটি বিষয়ে সবার মধ্যেই একরকম আক্ষেপ রয়েছে—মোবাইল ফোনে কথা বলার অনুমতি না পাওয়া। অনেকেই মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি চান, কিন্তু তা আইনের বাইরে হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ সেই আবদার মেনে নিতে পারছে না।

সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাতুল ফরহাদ জানিয়েছেন, এই কারাগারে দায়িত্বে থাকা সবাই দক্ষ, বিশ্বস্ত ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করে মনোনীত। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, বডিক্যামেরা এবং এআই নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দিদের ওপর সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সামান্য দায়িত্বহীনতার জন্যও বদলি করা হচ্ছে কারারক্ষীদের।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন,“বিশেষ কারাগারে সামান্যতম ভুলকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সরিয়ে ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগার চালু হয়। একইসঙ্গে নির্মিত হয় একটি মহিলা কারাগারও, যার উদ্বোধন হয় ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তবে নারী কর্মকর্তা ও রক্ষীর অভাবে তা চালু না করে বর্তমানে তা ‘বিশেষ কারাগার’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে