ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারের কাঠামোগত সমস্যা সমাধানে সরকারের নতুন পরিকল্পনা

২০২৫ মে ১৮ ১৯:৫৪:১৭
শেয়ারবাজারের কাঠামোগত সমস্যা সমাধানে সরকারের নতুন পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে এই বাজারকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে উন্নীত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আজ (১৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনে এসে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো: মহসিন চৌধুরী, মো: আলি আকবর, শেয়ারবাজার সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্স-এর সদস্যবৃন্দ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল-এর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম দেশের শেয়ারবাজারের সামগ্রিক অবস্থা, ডিএসই’র কার্যক্রম এবং শেয়ারবাজারের কাঠামোগত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের নানা কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো অর্থনীতিতে শেয়ারবাজার ও অর্থবাজারের ভূমিকা মুখোমুখী হওয়া, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতা, আইপিও প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন ও মূল্যায়ন, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পলিসি ও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট ও ডিসক্লোজারের নির্ভরযোগ্যতা, বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সক্ষমতা ও সুশাসন, ইনসাইডার ট্রেডিং, সার্ভেইল্যান্স ও শেয়ারবাজারের জন্য পলিসি সাপোর্ট।

বর্তমানে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ হিসেবে ডিএসই উল্লেখ করেছে সরকারি সিকিউরিটিজের উচ্চ সুদের হার, করপোরেট প্রফিট হ্রাস, নেগেটিভ ইক্যুইটি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ম্যানিপুলেটরের ভূমিকা।

শেয়ারবাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, বিও হিসাবের মেইনটেনেন্স ফি ছাড়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফ, ব্রোকারেজ কমিশন ০.৫% থেকে হ্রাস করে ০.৩৫% করা, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ একলক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত করা এবং লভ্যাংশের উৎসে কর ১০% বা ১৫% চূড়ান্ত করদায়ী হিসেবে বিবেচনা করা, নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা থেকে বিনিয়োগকারীদের মুক্ত করা, প্রতি এক লাখ টাকার অগ্রিম আয়কর ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা করা, সিসি একাউন্টের লভ্যাংশ ২৫% ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমা রেখে বাকী অংশ ব্রোকারদের ব্যবহারের সুযোগ দেয়া, নেগেটিভ ইক্যুইটি ধীরে ধীরে প্রভিশনিং করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়ন্ত্রক ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে প্রতিমাসে যৌথ বৈঠকের আয়োজন করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান ন্যূনতম ১০% করা, বহুজাতিক ও ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন দেশীয় কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা, শেয়ারবাজারে থেকে অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা, কর্পোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজের আয়কে করমুক্ত করা এবং কোম্পানির ৫০০ কোটি টাকার উপরে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে আইপিও/বন্ডের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন বাধ্যতামূলক করা।

সরকারের ম্যাক্রো চ্যালেঞ্জগুলো থেকে উত্তরণের জন্য শেয়ারবাজারকে ব্যবহার সম্পর্কে মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারের হাতে থাকা বহুজাতিক ও লাভজনক বেসরকারি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, সরকারের হাতে থাকা ব্যাংক, বীমা, বিমানসহ বিভিন্ন কোম্পানি বেসরকারীকরণ করা—যেখানে শর্ত থাকবে যে ২৪ মাসের মধ্যে তা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে, সরকার তার বিভিন্ন প্রাপ্যগুলোকে সিকিউরিটাইজেশন করতে পারে যা পরবর্তীতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে, সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি জমিতে আবাসন প্রকল্পসমূহকে রিয়েল স্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে করা যেতে পারে যা বিশ্বখ্যাত ফান্ড ম্যানেজাররা পরিচালনা করবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করতে পারে।

তিনি শেয়ারবাজার সংক্রান্ত পলিসিগত সিদ্ধান্তের নেয়ার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের ন্যূনতম একজন প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে অনুরোধ করেন।ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আন্তরিকতার সাথে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার তথা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। দেশের অর্থনীতি এখন ফিরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রভাব শিগগিরই শেয়ারবাজারে পড়বে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদেশীদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ারবাজারের শক্ত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। শেয়ারবাজারকে শক্ত কাঠামোয় গড়ে তুলতে পারলে শিল্পোন্নয়নে পুঁজিসংগ্রহের পথ সহজ হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের অবকাঠামো, মানব সম্পদ ও আর্থিক মূলধন সবই বিদ্যমান। শুধু দেশপ্রেমের মানসিকতায় এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনের উদাহরণ দেন।

তিনি আরও বলেন, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি চেষ্টা করছে। শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে খুব দ্রুতই পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার করা হবে, যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। শেয়ারবাজারে বিদ্যমান যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা আপনাদের বা বিএসইসি এবং ডিএসইর আওতার মধ্যে আছে সেগুলো আপনারা সমাধান করুন। আর যে বিষয়গুলো আপনাদের আওতার বাইরে সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করুন। আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমি আপনাদের সব কথাই শুনবো এবং বাজার উন্নয়নে যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই করবো।

এছাড়া শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনগণ বাজার উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাকচার, এসএমই মার্কেট, এটিবি মার্কেট, বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি, মার্কেটে পার্টিসিপেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে শেয়ারবাজারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে শেয়ারবাজারে সম্পৃক্ত করা, সিসিবিএল-এর বাস্তবায়ন, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয় বৃদ্ধি, দীর্ঘদিনের পুরাতন আইনগুলো যুগোপযোগী করা, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন রিভিউ করা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নতি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার হ্রাস, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স সুবিধা, সরকারি শেয়ার শেয়ারবাজার আনা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ সহায়তা, ব্রোকার কমিশন, ফিনান্সিয়াল লিটারেসি, মার্কেট পলিসি, নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং সিসি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

উল্লেখ্য, দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অধিকতর শক্তিশালীকরণ এবং শেয়ারবাজার উন্নয়নে গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. সাদেকুল ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বীমা ও শেয়ারবাজার অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাঈদ কুতুব ও কমিটির সদস্য সচিব বিএসইসি’র কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে