ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
Sharenews24

জালিয়াতির ফাঁদে জাপানি বিনিয়োগকারী, দুদক ও বিডার সহায়তা চান

২০২৫ মে ১৬ ১৫:৫৯:৩৬
জালিয়াতির ফাঁদে জাপানি বিনিয়োগকারী, দুদক ও বিডার সহায়তা চান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সফলভাবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ সফল করতে কেবল বিনিয়োগকারী আনাই শেষ কথা নয়, তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এক জাপানি উদ্যোক্তাকে প্রতারণার মুখে পড়ে হতাশ এখন ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।

প্রতারণা ও হয়রানির শিকার বিনিয়োগকারীর নাম কাওরি ফুনাহাশি। তিনি জাপানের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন এয়ারকন্ডিশনিং সার্ভিসের পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে "এনএসসিএস বিডি লিমিটেড" নামে একটি কোম্পানি গড়ে তোলেন কাওরি, যেখানে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশন সরবরাহ ও স্থাপনের কাজ করে আসছে।

স্থানীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশের খোরশেদ আলম মাইকেল নামের একজনকে। প্রণোদনার অংশ হিসেবে তাকে কোম্পানির ১ শতাংশ শেয়ারও প্রদান করা হয়। তবে দুই বছর যেতে না যেতেই খোরশেদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কোম্পানির অর্থে অফিসের জন্য ফ্ল্যাট কেনার কথা বলে ৬০ লাখ টাকা তোলেন তিনি, যা নিজের মেয়ের নামে বুকিং দেন। এরপর কোম্পানির ভাড়া বাবদ ১১ লাখ টাকা ব্যক্তিগত খাতে ব্যয় করেন। জমি কেনার কথা বলে আরও ১ কোটি টাকা তুলে একটি জাল দলিল জমা দেন এবং গাড়ি কেনার কথা বলে "কার কালেকশন" নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও কোম্পানি কোনো গাড়ি পায়নি।

২০২২ সালে কাওরি ফুনাহাশি রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন। তদন্তে পিবিআই জানায়, খোরশেদ আলম কোম্পানির ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিন পান। কিন্তু জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আর কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কাওরি ফুনাহাশি আদালতে হাজিরা দিতে বারবার জাপান থেকে বাংলাদেশে আসেন, কিন্তু বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অনিশ্চয়তা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান। বর্তমানে কোম্পানিটি বনানীর অফিস ছেড়ে আফতাবনগরে নতুন কার্যালয় খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হোসেন জানান, জাপানি নাগরিকেরা বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত নন। দীর্ঘ সময়েও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় কাওরি ভেঙে পড়েছেন। তিনি জানান, বিষয়টি বিডা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানো হয়েছে। ৮ মে বিডা চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও দিয়েছেন কাওরি।

অভিযুক্ত খোরশেদ আলম নিজেকে কোম্পানির মালিক দাবি করলেও পিবিআই তাকে বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে চাকরিচ্যুতির সময় তার শেয়ারও প্রত্যাহার করা হয়। বসুন্ধরার ডি ব্লকে খোরশেদের ঠিকানায় গিয়ে জানা যায়, তিনি অনেক দিন সেখানে থাকেন না। কেয়ারটেকার জানান, তিনি জাপানে আছেন বলে শুনেছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, নিপ্পন এয়ারকন্ডিশনিং সার্ভিস ৪০টির বেশি দেশে কার্যক্রম চালানো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এ রকম একটি কোম্পানি যদি বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ গুটিয়ে নেয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। আদালত আগামী ২২ জুনের মধ্যে উভয় পক্ষকে সমঝোতার জন্য সময় দিয়েছেন। কাওরি ফুনাহাশির প্রত্যাশা, দেশের সুনামের স্বার্থে দ্রুত ও যথাযথভাবে বিচার সম্পন্ন হবে এবং আত্মসাৎ করা অর্থ ও সম্পত্তি কোম্পানির কাছে ফিরে আসবে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে