ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

আবারও বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন ঝুঁকি

২০২৫ এপ্রিল ২৯ ১১:০০:৫৩
আবারও বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের সংঘাতময় রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর দেওয়ার জাতিসংঘের অনুরোধে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই করিডোরের নিরাপত্তা, তদারকি ও সহায়তা যথাযথ প্রাপকের হাতে পৌঁছানো সংক্রান্ত বিষয়ে এখনো স্পষ্টতা নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে বোঝাপড়া হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের করিডোর খুলে দেওয়া নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা ঝুঁকির জন্ম দিতে পারে। মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান বলেন, “এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত। করিডোরের নিরাপত্তা, এর রুট এবং কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কোনো দিকনির্দেশনা নেই।” তাঁর মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘ রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে। এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের সময় করিডোর বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সরকার তখন শর্তসাপেক্ষে এ প্রস্তাবের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব জানায়। একই বিষয়ে সদ্য সফররত মার্কিন কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চায় এবং তাদেরও বাংলাদেশের ইতিবাচক মনোভাব জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, “নীতিগতভাবে আমরা সম্মত হয়েছি। এটি একটি মানবিক করিডোর। তবে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, যার বিস্তারিত এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না।”

একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমার জান্তা বা আরাকান আর্মির সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করবে না। পুরো বিষয়টি জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।”

২০২৩ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হয়ে ইউনিসেফ ও ইউএনডিপির মাধ্যমে রাখাইনে ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানো হয়েছিল। তবে ২০২4 সালের মাঝামাঝি সময় থেকে মিয়ানমার জান্তা সরকার এসব সহায়তা আটকে দেয়, ফলে পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। খাদ্য ও পণ্য প্রবেশে সীমান্ত বন্ধ থাকায় ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে ঢোকার আশঙ্কা বাড়ছে।

রাখাইন অঞ্চলটি মাদক ও অবৈধ অস্ত্র পাচারের জন্য পরিচিত। করিডোর চালু হলে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অঞ্চলটিতে এখন কোনো স্বীকৃত প্রশাসন না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান বলেন, “যেমন গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়, তেমনি রাখাইনে কার্যকর করিডোরের জন্য অন্তত জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সম্মতি প্রয়োজন।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সামরিক সংঘাতে থাকা কোনো অঞ্চলের সঙ্গে জড়িত হলে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। একবার ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এটা পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকেও দেখা গেছে।”

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে