ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

বিএনপির টিকিটে সংসদে যেতে চান যেসব আইনজীবী

২০২৫ জুলাই ০৯ ২২:৩৯:৩৯
বিএনপির টিকিটে সংসদে যেতে চান যেসব আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আগামী বছরের শুরুতেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে রাজনীতির ময়দানে সবচেয়ে সক্রিয় দল হিসেবে নিজেদের জানান দিচ্ছে বিএনপি। প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির সামনে এবার এক সুবর্ণ সুযোগ উপস্থিত হয়েছে।

বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে দলের নেতাদের পাশাপাশি পেশাজীবীরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। স্বাভাবিকভাবেই, বরাবরের মতো এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন আইনজীবীরা। ইতোমধ্যে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু তারকা আইনজীবী। জনমত গড়তে নিজ এলাকায় সফর করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ জাঁদরেল আইনজীবীরা।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশ কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার ফেরত দিতে সক্রিয় ছিলেন। দলের দুর্দিনে ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা কাজ করেছেন। এবার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে সুযোগ সামনে এসেছে, সেখানে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে বলে তারা আশাবাদী।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সেক্রেটারি গাজী তৌহিদুর ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলসহ আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

তিনি ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসন থেকে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চান। তিনি ঘনঘন নিজ এলাকায় সফর করছেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আসাদুজ্জামান এর আগেও এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং এবারের নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষ পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

বরিশাল-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তিনবারের সভাপতি। তাকে ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রবীণ এই আইনজীবী এলাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং জনকল্যাণমূলক কাজে সক্রিয় রয়েছেন।

ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হতে কাজ শুরু করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে অনেকটা আশাবাদী।

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্ট্রগ্রাম) আসন থেকে এবারও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি এর আগেও দুইবার ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটিতে এবার ফজলুর রহমান আশা দেখছেন। যদিও ৫ আগস্ট পরবর্তী তার বিভিন্ন অসংলগ্ন বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করছে এবং দলের মধ্যেও তাকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি এবার ধানের শীষ পাবেন কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০১৮ সালে তিনি এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং এবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাচিত সিনেট সদস্য এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেক আগে থেকে এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম

ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি) থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক। নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় সরব রয়েছেন এই বিএনপির নেতা।

অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল। আইন পেশার কারণে ঢাকায় থাকলেও বিভিন্ন দিবস ও সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রায়ই তিনি এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন এবং এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে যাচ্ছেন।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব। বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী নিজ নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন এবং মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

ব্যারিস্টার নওশাদ জমির

তিনি সাবেক স্পিকার এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে। সাবেক স্পিকার বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। ফলে পঞ্চগড়-২ আসনে ছেলে নওশাদ জমিরের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

বিএনপির আলোচিত নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি অনেক দিন ধরেই এলাকায় কাজ করছেন। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও পরিচিত মুখ এবং টকশোতে নিয়মিত কথা বলেন। বিএনপির দুর্দিনেও তিনি দলের পক্ষে নির্ভয়ে কাজ করেছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য এবার আশা করছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী। রাগীবের বাবা আব্দুর রউফ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, নির্লোভ ও সৎ রাজনীতিবিদ। তিনি দুবার এমপি থাকাকালীন এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। বাবার পথ ধরেই হাঁটতে চান রাগীব। আগামী নির্বাচনে এই আসনে তিনি ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল। একই আসন থেকে মনোনয়ন চান বিএনপির অন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, যার বাবা এই আসনের সাবেক একাধিকবারের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। এলাকায় তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এলাকার নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে