ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

দুবাইয়ে অর্থপাচারকারী ৭০ বাংলাদেশি শনাক্ত

২০২৫ এপ্রিল ২৩ ২২:১৯:৩৯
দুবাইয়ে অর্থপাচারকারী ৭০ বাংলাদেশি শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থপাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি। তারা সেখানে কিনেছেন ৯৭২টি প্রপার্টি, যেগুলোর কাগজে-কলমে মূল্য প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন ডলার (৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার)। তবে প্রকৃত মূল্য আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ এবং ইউরোপীয় সংগঠন ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি-র তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদক এই তালিকায় থাকা ৭০ জন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছে।

এনবিআরের কাছে তথ্য চেয়েছে দুদক

এই ৭০ জনের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ দিয়েই দুবাইয়ের সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে। চিঠিতে নাম থাকলেও তাদের পদ বা বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হয়নি।

চিহ্নিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন— আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার তদন্তের প্রয়োজনে যেকোনো সময় নথিপত্র তলব করতে পারেন। কমিশন কেবল দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে।”

এর আগে ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল দুদক এই বিষয়ে অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-কেও তথ্য সংগ্রহের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, গোপনে বা প্রকাশ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে বাংলাদেশিরা দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন। ৪৫৯ জন বাংলাদেশির মালিকানাধীন ৯৭২টি সম্পত্তির মধ্যে ৬৪টি রয়েছে দুবাই মেরিনাতে এবং ১৯টি পাম জুমেইরাহ এলাকায়। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০০টি ভিলা এবং ৫টি ভবন বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাত্র চার-পাঁচজন ব্যক্তি মিলে কিনেছেন প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি। তথ্য গোপন করে এমন বিনিয়োগের প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির চাপ সত্ত্বেও এই সময়ে দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট খাতে বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছেন, এমনকি নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির নাগরিকদেরও পেছনে ফেলেছেন।

আলীম/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে