ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

আ.লীগকে সংসদে বিরোধী দল বানানোর গভীর চক্রান্ত

২০২৫ এপ্রিল ২০ ১৯:০৮:০৯
আ.লীগকে সংসদে বিরোধী দল বানানোর গভীর চক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয় বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশজুড়ে স্বস্তি ফিরে এলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নতুন এক রাজনৈতিক আতঙ্ক—আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান। বিতাড়িত এ দলটির হঠাৎ সক্রিয়তা ও মাঠে ফেরার তৎপরতায় বিশ্লেষক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশি-বিদেশি চক্রের সহায়তায় আওয়ামী লীগকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। কেউ কেউ ভারতে আশ্রয় নেন, কেউ আত্মগোপনে চলে যান। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়। যার প্রেক্ষিতে ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিটি এখনো ঝুলে আছে। এই রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে ফের মাঠে নামতে শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিছিল, সভা-সমাবেশ। সর্বশেষ ঢাকার উত্তরায় ঝটিকা মিছিল করে আলোচনায় আসে তারা। এতে নেতৃত্ব দেন উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের পরোক্ষ সমর্থনে এবং বিদেশি অর্থায়নে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে। ভারতের বিশেষ মহল থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে সক্রিয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকা থেকে বড় অঙ্কের কালো টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে দলটির পেছনে, যাতে তারা ফের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শক্তির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে ফায়দা লুটছে আওয়ামী লীগের গোপন এজেন্টরা। তারা বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেও স্থানীয় পর্যায়ে তৎপরতা বাড়াচ্ছে। এ কারণেই কিছু জায়গায় তাদের মিছিল বড় হতে দেখা যাচ্ছে।

এমন সময় যখন দেশ ইনক্লুসিভ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, তখনই চক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিরোধী দলে বসানোর রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাদের মতে, যদি এই ষড়যন্ত্র সফল হয়, তবে ‘ছত্রিশে জুলাই’ ঘটনার বিচারও রাজনৈতিক মামলার ফাঁদে পড়ে যাবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “যেদিন থেকে আমাদের আওয়ামীবিরোধী অবস্থানকে শিষ্টাচারবহির্ভূত বলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনারা করবেন কম্প্রোমাইজের রাজনীতি, আমি করব শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ।”

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে থেমে নেই ঘটনা। সম্প্রতি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা। একই ধরনের হামলা হয়েছে চট্টগ্রামে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ছয়জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, “পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ যেন আর রাস্তায় না নামতে পারে।”

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, “আমি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। তবে যারা দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে দুর্নীতি, সহিংসতা, হত্যা করেছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, “বাংলাদেশে আর যেন ফ্যাসিজম ফিরে না আসে, সে জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাই হবে একমাত্র সমাধান। না হলে ভবিষ্যতে এর চড়া মূল্য দিতে হবে জনগণকে।”

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে