ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

বিশ্ব বাজারে পোশাক রফতানি নিয়ে নতুন সংকট

২০২৫ এপ্রিল ১২ ১২:২৪:৩৭
বিশ্ব বাজারে পোশাক রফতানি নিয়ে নতুন সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে ভারতের সড়কপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশ প্রায় ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রফতানি করেছে ৩৬টি দেশে। এতে ডলারে আয় হয়েছে প্রায় ৪৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিমাসে গড়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৭৬ কোটি টাকা। তবে হঠাৎ করে ভারত এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে রফতানি কার্যক্রম।

পণ্য পরিবহন হতো ট্রাকযোগে, বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর কিংবা সমুদ্রবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে। এই পথ ব্যবহার করলে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের জট এড়ানো যেত এবং খরচও কম পড়তো। তবে ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) হঠাৎ এই সুবিধা বাতিল করে।

এর ফলে বেনাপোলে আটকে পড়ে তিনটি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের চারটি ট্রাক। এসব পণ্য স্পেনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পেট্রাপোল কাস্টমস সেগুলোর প্রবেশে অনুমতি না দেওয়ায় ট্রাকগুলো ফেরত নিতে হয়। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এই রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশ ৩৪ হাজার ৯০৯ মেট্রিক টন তৈরি পোশাক রফতানি করেছে।

পোশাক রফতানির গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, ব্রাজিল, ইতালি, ডেনমার্ক, মেক্সিকো, রাশিয়া, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, তাইওয়ানসহ আরও অনেকে। রফতানি পণ্যের মধ্যে ছিল নারী ও পুরুষদের তৈরি পোশাক, শিশুদের পোশাক, ট্র্যাকস্যুট, স্যানিটারি ফাইবার ও কটন পোশাক।

২০১৮ সাল থেকে ভারত পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের পণ্য কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়। তখন থেকে ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা ব্যবহার করে প্রায় ৯৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যার মধ্যে ৬০৬টি প্রতিষ্ঠান পোশাক খাতভুক্ত। গত বছর কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রায় ৪৪ হাজার টন পণ্য রফতানি হয়েছে, যা এখন শাহজালাল বিমানবন্দরে সামলাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পড়বে বাড়তি ৭৩০টি ফ্লাইটের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বিকল্প হিসেবে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ বাড়ানো এবং শাহজালাল বিমানবন্দরকে আরও কার্যকর করা ছাড়া উপায় নেই। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “এ ধরনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য নেতিবাচক। বিকল্প অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।”

বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। বিকল্প পথ বন্ধ হওয়ায় খরচ ও সময় দুই-ই বাড়বে।” সাবেক সভাপতি রুবানা হক জানান, “আমরা নতুন বিকল্প পথ খুঁজছি। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “ভারতের সিদ্ধান্তে বড় কোনও সমস্যা হবে না। আমরা আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো।” তিনি আরও জানান, এরইমধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং দ্রুত কাঠামোগত সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভারতের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা উচিত। একইসঙ্গে বিকল্প রফতানি পথ ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে