ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

এক বছরের কাজের বর্ণনা দিলেন আইন উপদেষ্টা 

২০২৫ জুলাই ৩১ ১৯:৪১:৪৭
এক বছরের কাজের বর্ণনা দিলেন আইন উপদেষ্টা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেছেন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য শেয়ার করেন।

ড. আসিফ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রণালয় গত এক বছরে যা করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য কোনো সরকার এত কম সময়ে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারেনি। তারা আইনি সংস্কার করেছে, ডিজিটালাইজেশন করেছে এবং হাজার হাজার হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করেছে।”

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূলত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসে। তাদের নেতৃত্বে আইন মন্ত্রণালয় চারটি প্রধান খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে:

১) আইনি সংস্কার

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হয়েছে।

গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের অধিকারের পাশাপাশি সাক্ষী নিরাপত্তা, আপিল ও ক্ষতিপূরণ বিধান যোগ হয়েছে।

সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগের জন্য ২০২৫ সালের অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও স্বতন্ত্র জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।

দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করে সাক্ষ্যগ্রহণে এফিডেভিট চালু এবং অনলাইনে সমন জারি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ফৌজদারি আইনে রিমান্ড ও গ্রেফতার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে।

মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সময়সীমা নির্ধারণ, তদন্ত ব্যর্থতার দায়, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং পৃথক ট্রাইব্যুনাল চালু হয়েছে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের জন্য সহজীকরণ করা হয়েছে।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে পুরোনো নিপীড়নমূলক ধারাগুলো বাতিল এবং মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালায় জেন্ডার বৈষম্য বিলুপ্ত এবং অনলাইন নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

২) প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন

বিচারকদের পদ সৃষ্টির ক্ষমতা সুপ্রীম কোর্টকে প্রদান করা হয়েছে এবং সরকারি পদায়নের নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের প্রতিটি আদালতে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

আদালতের কর্মচারী নিয়োগ এখন কেন্দ্রীয়ভাবে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে হচ্ছে।

বিচারকদের সম্পত্তি হিসাব গ্রহণ ও সাবরেজিস্ট্রারদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ে প্রসিকিউশন মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

ডাক্তার ও ম্যাজিস্ট্রেটদের অনলাইন সাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

৫০% সরকারি ফাইল ডিজিটাইজড এবং প্রত্যয়ন সেবা শতভাগ অনলাইন করা হয়েছে।

অনলাইন বেইলবন্ড সিস্টেম চালুর জন্য সফটওয়্যার প্রস্তুত এবং পরীক্ষামূলক ব্যবহার শিগগিরই শুরু হবে।

৩) হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার

জেলা ও কেন্দ্রীয় যাচাই শেষে ১৫,০০০-এর বেশি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ হয়েছে।

সাইবার আইনের অধীনে দায়ের হওয়া ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স ও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৭৫২টি মামলা প্রত্যাহার হয়েছে।

লক্ষাধিক রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিক হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

৪) দৈনন্দিন কার্যক্রম ও প্রশাসনিক অগ্রগতি

মন্ত্রীপর্যায়ে ১২৮৩টি নথি নিষ্পত্তি (পূর্বে ৮৩৪টি)।

৩৯১টি বিষয়ে আইনগত মতামত প্রদান (পূর্বে ১৮০টি)।

১.৬ লাখের বেশি ডকুমেন্ট সত্যায়ন (আগের চেয়ে দ্বিগুণ)।

১২টি অংশীজন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।

বিভিন্ন কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান।

আইন ও প্রবিধান কোডিফিকেশনের কাজ শুরু।

সরকারি আইন কর্মকর্তা ৪৮৮৯ জন, এটর্নি ২৭৪ জন এবং সুপ্রিম কোর্টে ২৮ জন বিচারপতির নিয়োগে সহায়তা।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে